সিরাজ মুনির (ﷺ) প্রস্থান

আবু ইউসুফ সুমন

মক্কা বিজয় দ্বীনের দাওয়াত পূর্ণ হওয়ার পরে…
নূর নবীজির ভীষণ অসুখ বেশ কিছুদিন ধরে।
অসুস্থ তাও নববীতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এসে
সালাত পড়ান সাহাবিদের মুখর সমাবেশে!

দিনে দিনে অসুস্থতা যাচ্ছে বেড়ে অতি
আন নাবিউল উম্মি তবু করছেন ইমামতি।
এমনই এক মাগরিবেও স্বস্তি সবার প্রাণে-
মুরসালাতের আয়াত শুনে পবিত্র জবানে (ﷺ)!

ব্যাধিসিক্ত রাত এগিয়ে ইশার আজান হলো
রাসূল কোথায়? যাকে ছাড়া জামাত কি হয় বলো?
আউয়াল ওয়াক্ত ফুরিয়ে আসে নবী আসেন না তো
উৎকণ্ঠা বাড়ছে সবার বাড়ছে আঁধার রাতও!

মা আয়িশার ঘরে রাসূল (ﷺ) হুশ ফিরেছে সবে
আদেশ এলো এখন থেকে সিদ্দিক* ইমাম হবে।
সন্ধ্যে আসে দিন পার হলে সন্ধ্যা মদীনাতে
আরবভূমি কাঁদছে কেমন অচীন আশঙ্কাতে।

দিন গড়িয়ে সোমবার এলো ভোর হয়েছে তখন
ফজর সালাত মুসল্লীরা করছে আদায় যখন-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজের ঘরের পর্দাটা ফাঁক রেখে
মুচকি হাসেন নামাজরত সাহাবিদের দেখে।

‘মেসওয়াকের সুবাস নিলেন (ﷺ)’ সময় ধীরে চলে
“বাবা ভীষণ কষ্টে আছেন” রাসূল কন্যা বলে।
বলেন (ﷺ) সেটার প্রতুত্তরে “দোজাহানের সাঁকো”-
আজকে থেকে তোমার বাবার কষ্ট হবে নাকো!

মৃত্যুমুখে আন-নাজিরু (ﷺ) মা আয়েশার কোলে-
মাথা রেখে- অসীম পথের যাচ্ছে মায়ায় ঢলে!
“আল্লাহ ছাড়া নেই তো মাবুদ। মৃত্যু কঠিন বড়
নবী, শহীদ…তাদের সাথে আমায় ক্ষমা করো।”

তর্জনীটা উঁচিয়ে পরে- গন্ধভরা মালা
বলতে থাকেন জবান দিয়ে- “ফীর-রফিকুল আ’লা!”
“চোখের পাতা হচ্ছে ভারী” নবীর (ﷺ) ওফাত হলো
গাছের পাতায় অশ্রু নেমে করছে টলোমলো।

কী হয়েছে? কী হারালো? কীসের খবর আসছে?
দিনের আলোয় বিষাদভরা আঁধার চোখে ভাসছে!
হৃদয়ভেদী শোকের মাতম আকাশ বাতাস জুড়ে
অজানা এক শূন্যতা আজ দিচ্ছে হৃদয় পুড়ে!

সত্যি কি নেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)? “রাসূল (ﷺ) মরেন নি তো-
‘যে বলবে নেই নবীজি (ﷺ)’ সে থাকবে না জীবিত!”
তরবারিটা উঁচিয়ে ধরে উমার হুমকি দিলো
যুক্তি দিলো মুসা যেমন রবের কাছে ছিলো-

ফিরেন আবার কালিমুল্লাহ আপন জাতির কাছে
“ওয়াল্লাহি!” এবারও তাই রাসূল (ﷺ) বেঁচে আছে!
সংকটের এই মুহূর্ততেই আবু বকর ফিরে
মসজিদে তাই সাহাবীদের জটলা তাকে ঘিরে।

তার ঠিক আগে গুহার-সঙ্গী* এসে সুনহ থেকে-
কাঁদতে থাকে প্রশংসিত’র নিথর দেহ দেখে।
সবাই যখন দিশেহারা বিপর্যস্ত ঝড়ে
অস্থিতিশীল মুহূর্ততে নৌকাতে হাল ধরে!

খলিফাতুর নবী এসে বললো দরদ ঢেলে
“তোমরা কভু হটবে পিছু রাসূল মরে গেলে?
মুহাম্মাদের (ﷺ) পূজা যারা করতে তারা জানো
আল্লাহ ছাড়া সৃষ্টিকুলে বাঁচবে না এক প্রাণও!

মুহাম্মদও মারা গেছেন শুনো কুরআন বলে
তিনি রাসূল আর কিছু নয় মৃত্যু তাঁরও হলে-
ফিরবে পিছন? অনেক নবী আগেও গেছেন চলে!…”
আবু বকর সত্য শুনান অনন্য কৌশলে!

পাক কিতাবের সাফ কথনে ফারুক* কাঁপতে থাকে
সিরাজ মুনির (ﷺ) প্রস্থান হলো আল-আলিইউ’র (ﷻ) ডাকে।
উসমান হয় বাকরুদ্ধ আলীও মুখ লুকায়
উম্মাহ এমন মনের ক্ষত কী দিয়ে আজ শুকায়?

মন খারাপে মন ভালো হয় থাকলে যারই (ﷺ) সাথে
কষ্ট বিপদ সমস্যা ভয় সকল অবস্থাতে-
থাকতো যিনি ছায়ার মতো প্রাণ থেকেও প্রিয়-
হয় না কভু তাঁর (ﷺ) মতো কেউ হৃদয়ের আত্মীয়!

শান্তনাও ভরসার এই রহমতের নবী-
ইন্তেকালে ঝর্না নদী নিশ্চল হলো সবই!
থমকে গেছে পাখির কুজন মেঘের ছুটে চলা
কাঁদছে সবাই হয় না শুধু শব্দ করে বলা!

গোসল দাফন সব কিছু হয় নবীর পরিবারে
প্রিয় রাসূল (ﷺ) যেখানটাতে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ে-
সেখানটাতেই জানাজা হয় এককভাবে দলে
পুরুষ, নারী, দাস এভাবে সালাত আদায় চলে…

বুধবার দিন মাটি খোঁড়ার শব্দ গভীর রাতে
উম্মাহাতুল মুমিনীনের কান্না মদীনাতে!
মুখ চেপেও পারছে না কেউ এ শোক চাপা দিতে
কান্না করে সাহাবিরা কান্না নববীতে!

দাফন হলো নবীউল্লাহ হাবিবুল্লাহ রবের
মদীনাতে শূন্যতা এই নিঁখুত অবয়বের (ﷺ) !
ফজর ওয়াক্তে বিলাল যখন আজান দিতে এলো-
দিচ্ছে আজান…কান্না এসে কণ্ঠ ছুঁয়ে গেলো…

“অলিগলি পথে প্রান্তে নবীর (ﷺ) স্মৃতি ভাসে
এদিকসেদিক যেদিক ফিরি কান্না চলে আসে।”
শোকে কাতর বিলাল পরে দামেস্কে যায় চলে
তপ্ত মরু নবীর (ﷺ) শোকে ভিজলো চোখের জলে।

আজকে যারা কষ্ট-শোকে, যাচ্ছি তাদের বলে
জগৎ থেকে স্বয়ং প্রিয় রাসূল (ﷺ) গেছেন চলে।
এরচে বড় দুঃখ কি হয়? সাহাবিরা তবু-
ধৈর্য ধরে হয়নি হতাশ, হয়নি উদাস কভু!

তাইতো ওঁরা ইতিহাসে স্বর্ণযুগের তারা
শোক কাটিয়ে পাল্টে দিলো বিশ্বটাকে যাঁরা।
আমরা শুধু স্মরণ রাখি মৃত্যু নামের রীতি
দুনিয়াতে সবাই কারণ, ক্ষণিকের অতিথি…

ইবাংলা/এসআরএস

সিরাজ মুনির (ﷺ) প্রস্থান