মসলিন তুলা চাষে নতুন সম্ভাবনা

ইবাংলা ডেস্ক

একসময় দেশের মসলিন তুলা ছিল বিশ্বখ্যাত। দেশেই উৎপাদিত হতো এই তুলা। ব্রিটিশ শাসনামলে হারিয়ে যায় সেই তুলা চাষ। বেকায়দায় পড়ে দেশের বস্ত্র খাত।

  • দেশে বস্ত্র খাতের জন্য বছরে প্রায় ৪০ লাখ বেল আঁশ তুলার প্রয়োজন পড়ে। প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিংহভাগ তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। সম্প্রতি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ তুলা চাষে নতুন করে সম্ভাবনা দেখা দেয়। বর্তমানে মসলিন তুলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল, যা বস্ত্র শিল্পে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ১০ জন কৃষক এসব প্রকল্পে তুলা চাষ করেছেন। প্রত্যেকটি প্রকল্পে ৩৩ শতাংশ করে জমি রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মোট ১০টি প্রদর্শনী প্রকল্প এখন মসলিন তুলা চাষের নতুন ক্ষেত্র।

  • দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তুলা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রংপুরের পীরগাছায় ১০ জন কৃষক বাছাই করা হয়। উঁচু মানের ৩৩ শতাংশ করে জমিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাদের। সেই জমিতে হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের মসলিন তুলা চাষের জন্য কৃষকদের দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা।

উপজেলার পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম আলী তার ৩৩ শতাংশ জমিতে সিবি হাইব্রিড-১ জাতের মসলিন তুলা চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় তার জমি এখন তুলায় পরিপূর্ণ। সম্ভাবনাময় হিসেবে উঁকি দিচ্ছে ফুল ও ফল। আর ক’দিন পরেই ঘরে উঠবে কাঙ্ক্ষিত ফসল।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তুলা চাষের মাত্র ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে তুলা বোল ফুটতে শুরু করে। যা ৩ থেকে ৪ বারে সম্পূর্ণরূপে ফোটার পর গাছে শুকিয়েই তোলা যায়। এতে আঁশ ও বীজের মান অটুট থাকে। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়।

তুলা চাষী ইব্রাহীম আলী বলেন, প্রথমে তুলা চাষে রাজি ছিলাম না। পরে কৃষি অফিসের স্যাররা নানা পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় তুলা চাষ করেছি। গাছ ও ফুল দেখে আমি আশাবাদী। ভালো ফলন হবে। তুলার ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সবসময় পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

পারুল ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান বলেন, মসলিন তুলা বেশ লাভজনক ফসল। প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৩৮ মণ তুলা উৎপাদন হয়। প্রতি মণ ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে সহজে বিক্রি করা যায়। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে এসব তুলা কেনেন। আবার তুলার গাছ এবং পাতা দিয়ে ভোজ্য তেলের পাশাপাশি গবাদিপশু ও মাছের খাদ্য হিসেবে খৈল তৈরি করা যায়। তা থেকেও আয় সম্ভব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম বলেন, উপজেলায় তুলা চাষের জন্য ১০ জনকে জমি তৈরি ও বীজ বপনের জন্য ২৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। তুলা অর্থকরী ফসল হিসেবে আগামী দিনে আরও চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে। এ থেকে কৃষকরা অল্প খরচে অধিক লাভের মুখ দেখবে বলে আমরা আশাবাদী।

 ইবাংলা/ এইচ/০৭ নভেম্বর, ২০২১

Comments (0)
Add Comment