কুষ্টিয়ার মিরপুরে আলোচিত স্কুলছাত্র দেব দত্ত (৯) হত্যা মামলায় একজনকে ফাঁসি এবং দুইজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের উভয়কে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সৈয়দ হাবিবুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি সবুজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের তুফান মল্লিকের ছেলে সবুজ মল্লিক।
এ ছাড়াও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের আমান আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান হাব্বুল এবং এরশাদ একই গ্রামের মৃত আনসার আলীর ছেলে। তারা দুজনই পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ জুন সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিথা গ্রামের পবিত্র দত্তের ছেলে চিথলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র দেব দত্ত (৯) প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর স্থানীয়দের কাছ থেকে তার পরিবার জানতে পারে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তা থেকে দেবকে তুলে নিয়ে যায়। ওইদিন বিকেলে তার বাবা স্কুলশিক্ষক পবিত্র দত্তের মুঠোফোনে অপহরণকারীরা ফোন করে অর্ধ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ঘটনার ১৬দিন পর ২৫ জুন দুপুরে চিথলিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়ির শৌচাগারের পাশে গর্ত খুঁড়ে দেবদত্তের হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দেব দত্তের বাবা পবিত্র দত্ত বাদী হয়ে মিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর ২৬ জুন উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের আমতলা মাঠে ও চিথলিয়া প্রবেশমুখ ব্রিজের পাশে স্কুলছাত্র দেবদত্ত অপহরণ ও হত্যা মামলার দুই আসামি নাঈম ইসলাম (২৭) ও জোয়ার আলী (২৮) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
বন্দুকযুদ্ধে নিহত নাঈম ইসলাম মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মালিথা পাড়ার জহুরুল ইসলামের ছেলে ও জোয়ার আলী একই গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে।
তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলীম আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ৭ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে রোববার আদালত এ রায় দেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্র পক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী জানান, অপহরণের পর হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আসামি সবুজকে ফাঁসি এবং হাবিবুর রহমান ও এরশাদ আলীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সবুজকে পুলিশ পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। হাবিবুর রহমান ও এরশাদ আলী পলাতক রয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সবুজ মল্লিককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়াও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাবিবুর রহমান হাব্বুলকে এক লাখ ৫০ হাজার এবং এরশাদ আলীকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
ইবাংলা/এএমখান/নাঈম/০৭ নভেম্বর, ২০২১