নওয়াজের ওপর ভরসা করতে পারবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী?

আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে দেশে ফিরছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় তিনি যেন সেনাবাহিনীর পথের কাঁটা হয়েই ছিলেন।

সবশেষ পাকিস্তান ছাড়ার আগেও তিনি দুর্নীতির অভিযোগে কারান্তরীন ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৯ সালে তাকে কারাগার থেকে বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি তখন লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন।

কিন্ত এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। পাকিস্তানের যে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নওয়াজকে উৎখাত করেছিল, তারাই এখন আবার তাকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

আরও কিছু বদল ঘটেছে। নওয়াজের প্রতিপক্ষ ইমরান খান, যিনি ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি এখন আর ক্ষমতায় নেই। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে তিনি কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাজ্যজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ

সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিতে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে এবং কয়েকবারই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। নওয়াজ শরীফের সঙ্গেও সেনাবাহিনীর ইতিহাস টানাপোড়েনের।

তারপরও এখন উপযুক্ত আর কেউ না থাকায়, সেনাবাহিনী হয়ত শরিফকেই আরেকটা সুযোগ দিতে চাইছে বলে মনে করেন ওয়াজাহাত মাসুদের মতো রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা।

মাসুদ বলেন, “প্রথমে সেনাবাহিনী তাদের জন্য নিরাপদ ও ভাল পছন্দ মনে করে ইমরান খানকে বেছে নিয়েছিল, কিন্তু যখন তারা তাদের কর্তৃত্ব হুমকির মুখে পড়েছে বলে বোধ করল, তখন তারা ইমরানকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। আর এখন মনে হচ্ছে, এবার নওয়াজ শরিফের পালা।”

তিনি ও অন্য পর্যবেক্ষকরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে শরিফের বোঝাপড়ার একটা লক্ষণ দেখতে পেয়েছেন। যদিও লন্ডনে থাকার সময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শরিফ সমালোচনা করেছিলেন।

তারা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে শরিফও তার রাজনীতির শুরুর দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়েছিলেন এবং তিনিও ইমরান খানের মতোই একইরকম সমালোচনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন।

তারপরও শরিফের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার জুড়ে বেশিরভাগ সময় তার সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক জটিল থেকেছে। এখন তিনি তার দান চালবেন কীভাবে?

এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য নাদিম আফজাল চ্যান বলেন, তিনি (নওয়াজ) ‘ইয়েস স্যার’ বলার মানুষ হবেন না। নাদিম বলেন, “নওয়াজ শরিফ তার সীমা সম্পর্কে জানেন। সে সীমা কখন পার করা যাবে আর কখন যাবে না তাও তিনি জানেন।”

ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন নাদিম আফজাল। তিনি ও অন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোনও এক পর্যায়ে ঠিকই আবার দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত হবে – এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তবে এসব কিছুর আগে নির্বাচনের জন্য তারিখ ঠিক হতে হবে। আর অর্থনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোটাই রাজনৈতিক প্রচারণার মূল বিষয় হয়ে উঠবে।

নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে?

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এখন কারাগারে। অন্যদিকে, গত মে মাসে ইমরান গ্রেফতারের প্রতিবাদে হওয়া ব্যাপক বিক্ষোভের পর ধরপাকড়ে তার দলও এখন অনেকটাই দুর্বল অবস্থানে। এমন অবস্থায় অনেকেই বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত জনমত জরিপে নির্বাচনের মাঠে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এগিয়ে ছিল। কিন্তু পিটিআই নেতা জুলফি বুখারি বলছেন, এখন আর নির্বাচনের মাঠে সবাইকে সফল হওয়ার সমান সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না –অন্যান্য দলেরও মত একই।

“আপনি কীভাবে নির্বাচনের আগে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকে কারাগারে রাখতে পারেন?” প্রশ্ন করেন বুখারি বলেন, “আপনি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করলে দেখবেন ইমরান খানের ভোট ব্যাংক কত শক্তিশালী।”

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে নওয়াজ শরিফ যখন কারাগারে ছিলেন, তখন তার দলের সদস্যরাও একই ধরনের কথা বলেছিলেন। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এবার কেবল পিটিআই এর জায়গায় সুবিধা পাবে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)।

এখানে মূল বিষয় এখন অর্থনীতি। দুই দলই এ সংকটের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। আকাশ ছোঁয়া মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিই হবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের মনে ভাবনার মূল বিষয়।

পিএমএল-এন যদিও দাবি করছে যে, নওয়াজ শরিফ আগেও ক্ষমতায় ছিলেন এবং তিনি জানেন কীভাবে সব ‘আবারও ঠিক করতে হবে’। কিন্তু কীভাবে তিনি এটি করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তাছাড়া, দেশের পচে যাওয়া গণতন্ত্র দেখে বেশিরভাগ পাকিস্তানি এখন ভীষণ হতাশ। বিশেষত তরুণরা এখন খোলাখুলিভাবেই রাজনীতিবিদ ও রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে কথা বলছে। সূত্র: বিবিসি

ইবাংলা/এসআরএস

নওয়াজপাকিস্তানের সেনাবাহিনী