ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতি চলছে। চারদিনের যুদ্ধবিরতির আজ শেষ দিন। রোববার তৃতীয় দিনে হামাস তাদের কাছে থাকা ১৭ বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েল তৃতীয় দিনেও ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। এ নিয়ে তিনদিনে দুই পক্ষে মোট মুক্তি পেয়েছে ১৭৬ জন।
গত শুক্রবার থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের সম্মতিতে চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর প্রথম দিন হামাস ২৫ বন্দীকে মুক্তি দেয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীটি মুক্তি দেয় ১৭ জন করে। অপরদিকে গত তিনদিনে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৩৯ জন করে মোট ১১৭ ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে ইসরায়েলের ১৭ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। রোববার দ্যা টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, জিম্মিদের রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন হলেন ইসরায়েলি। আর বাকি চারজন বিদেশি নাগরিক।
আরও পড়ুন>> মনোনয়ন পেয়ে যা বললেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের তৃতীয় দিনে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দির তৃতীয় ব্যাচকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। তাদের মুক্তি উপলক্ষ্যে রোববার রাতে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বহু ফিলিস্তিনি রাস্তায় নেমে আসেন।
আজ যুদ্ধবিরতি শেষ হলে নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি দুই পক্ষ। এদিকে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরই গাজায় পুনরায় হামলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল ও ইসলামপন্থী হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী কাতার সরকার আশা করছে বর্তমানে সম্মত হওয়া চার দিনের বাইরেও যুদ্ধবিরতি বাড়ানো যাবে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে বলেছেন, ‘‘আমরা আশা করছি এই দুই দিনের মুক্তি এবং চার দিনের চুক্তি থেকে যে গতি এসেছে, তার ফলে এই চার দিনের পরেও যুদ্ধবিরতি আরও বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। এজন্য বাকি জিম্মিদের বিষয়ে আরও গুরুতর আলোচনায় যেতে হবে।
এর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ‘বাস্তবসম্মত সুযোগ’ রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ সময় হামাস ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়।
হামাসের হামলার পর ওইদিন থেকেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ব্যাপক ও ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ৪৮ দিন ধরে তাদের অবিরাম হামলায় গাজার বাসিন্দা সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। কাতারের মধ্যস্থতায় ৪৮ দিন পর তারা হামলা থামিয়ে যুদ্ধে চার দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছায় হামাস ও ইসরায়েল, যা শুরু হয় গত শুক্রবার থেকে।
ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের চার দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়তো ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী- আইডিএফকে বাড়িয়ে নয়দিন দেরি করাবে। তবে সেটা নির্ভর করছে হামাস কতজন জিম্মিকে মুক্তি দিতে চায় তার ওপর।
ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, জিম্মি মুক্তির এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যে যুদ্ধ, সেটা আবারও শুরু হবে। যদি ইসরায়েলি বাহিনী এরপর গাজার দক্ষিণে মনোযোগ দেয় তখন পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, হামাস যেখানেই থাকবে, তাদের ধ্বংস করা হবে।
ইবাংলা/এসআরএস