নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে এক মাস ধরে লাগাতার হরতাল-অবরোধ করছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো। সেই আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও গত এক মাসে ২১৭টি যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ট্রেনও। এসব অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। আহত হয়েছেন অনেকে।
তাদের এই কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক কার্যালয় ও সরকারি অফিসসহ ১১টি স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরে দুটি স্কুলেও আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন বলছে, প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন>> জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে ই-বাংলা সম্পাদক ইস্রাফীল হাওলাদারের ঢাকা ত্যাগ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে পুড়িয়ে দেওয়া যানবাহনের মধ্যে ১৩৫টি বাস, ৩৭টি ট্রাক, ১৬টি কভার্ড ভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল এবং ২টি প্রাইভেট কার রয়েছে। এছাড়া ৩টি মাইক্রোবাস এবং একটি করে পিকআপ, অটোরিকশা ও লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বাদ যায়নি ট্রেনও। সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও সিলেটে স্টেশনে দাঁড়ানো তিনটি ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে দুটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন ও একটি কমিউটার ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুড়ে গেছে ট্রেনগুলো অন্তত নয়টি কোচ। এছাড়া ১১টি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিস, কাউন্সিলর অফিস,পুলিশ বক্স, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার ও শোরুম আগুন দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়া পল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকেই শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও এবং হামলার ঘটনা। সমাবেশকে ঘিরে বেপরোয়া বিএনপি কর্মীরা ওই দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর্স ইনস্টিটিউটে। লম্বা সময় ধরে রাজধানীর কাকরাইল, নয়াপল্টন, রাজারবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, পল্টন, সেগুনবাগিচাসহ আশপাশের এলাকায় চলে বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডব। তাদের পিটুনিতে মারা যান পুলিশের কর্তব্যরত এক সদস্য। আহত হন অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক। বিএনপি কর্মীরা রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে।
তারপর দিন দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করে বিএনপি। এক দিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচী পালন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর থেকে গত এক মাসে শুক্র ও শনিবার এবং মঙ্গলবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি চারদিন অবরোধ ও হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সবমিলিয়ে তারা গত এক মাসে আট দফায় মোট ১৫দিন অবরোধ এবং তিন দিন হরতাল পালন করেছে।
ইবাংলা/এসআরএস