জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত

ইস্রাফিল হাওলাদার, দুবাই থেকে

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত প্রযুক্তির নাম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে। গত মার্চে গোল্ডম্যান স্যাকস ইকোনমিক রিসার্চের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই এআইয়ের পেছনে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। আর মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এত বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আকর্ষণ করায় মোট দেশজ উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এবার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় সেই এআই ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শনিবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের দশম দিনে জাতিসঙ্গের ক্লাইমেট চেইঞ্জ টেকনোলজি নির্বাহী কমিটি (টেক) এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কমিটি বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) কাজে লাগিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল বলেন, আমরা ক্রমবর্ধমান প্রমাণ দেখছি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি অমূল্য যন্ত্র হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে। যদি আমরা এআই-এর সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন থাকি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তিকে কাজে লাগানোর এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উদ্ভাবকদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেই তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন>> স্বাস্থ্য সেক্টরের যন্ত্রপাতিও জলবায়ু বান্ধব হওয়া উচিত: জাহিদ মালেক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিমন্ত্রী ওমর সুলতান আল ওলামা বলেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং রিমোট ওয়ার্ক অ্যাপ্লিকেশনগুলো জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার জন্য কৌশলগত সম্পদ হিসাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর জন্য এটিকে জাতীয় নীতি ও পরিকল্পনার সাথে একীভূত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইন্টিগ্রেশন রিয়েল-টাইম জলবায়ু ডেটার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তননীতিকে একীভুত করতে ডেটা বিশ্লেষণের ব্যবহারকে সহজতর করে। যার ফলে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং শক্তির ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে অগ্রসর করে। এই ব্যবস্থা এবং নীতিগুলিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়, বরং একটি সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ হিসাবে দেখা উচিত।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যেই জলবায়ু প্যাটার্ন এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির পূর্বাভাস দিতে, ফসলের ফলন উন্নত করতে, জলের ব্যবহার কমাতে বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবস্থাকে অপ্টিমাইজ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে৷

সম্মেলনে বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি ও মন্ত্রী শান্তাল মুনরো-নাইট বলেছেন, আমরা দ্বীপের উন্নয়নে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্ততার কার্যনকারিতা পরীক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক কাজ করছি। তিনি বলেন, জলবায়ু প্রশমন এবং ছোট দ্বীপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অভিযোজন কার্যক্রমকে জোরদার করতে হবে।

সেনেগালের যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ এবং ডিজিটাল অর্থনীতির মন্ত্রী মুসা বোকার থিয়াম বলেন, ডিজিটাল বিভাজন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে, প্রযুক্তিকে খাপ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ। এই উদীয়মান প্রযুক্তি সরঞ্জামগুলিতে স্থানীয় ভাষার সাথে চ্যাটবট ভয়েসের একীকরণ করা হলে তা কার্যকর হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জলবায়ু উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির সহকারী আলী জাইদি বলেন, আমাদের অবশ্যই ঝুঁকিগুলি পরিচালনা করতে হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেমনটি এআই বা কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাহী আদেশ প্রদান করেছেন। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে, আমরা দায়িত্বের সঙ্গে এই উদীয়মান প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি এবং এ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, আমাদের সবাইকে আরও টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক করে তোলে এবং সবার জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত পরিচ্ছন্ন শক্তির ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারে।

টেকনোলজি মেকানিজম ইনিশিয়েটিভ অন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন-এর উদ্যোগে স্বল্পোন্নত দেশ এবং ছোট দ্বীপ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির ওপর ফোকাস রেখে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জলবায়ু সমস্যার সমাধানগুলোকে সমাধানের জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইবাংলা/এসআরএস

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা