- করোনা মহামারির স্থবিরতা কাটিয়ে বিশ্ব যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখন চীন আরও বেশি অন্তর্মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, যিনি মহামারি শুরুর পর বিশ্বের কোথাও আর সফরই করেননি। জিন পিংকে সবশেষ দেশের বাইরে বিশ্ব মঞ্চে দেখা গেছে ৬৫০ দিন আগে।
সিঙ্গাপুর পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি মিয়ানমার সফরের পর থেকে আর কোন নেতার সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ করেননি, কোনো আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেননি বা কোনো বিদেশ সফরেও যাননি চীনা প্রেসিডেন্ট। ফলে, তার এই আত্ম-অবরোধ যথারীতি রহস্যের জন্ম দিচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরে বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। বিশ্ব নেতৃত্ব তাই খোলস ছেড়ে বিভিন্ন দেশে সফর করছেন, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করছেন৷ সেখানে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হচ্ছে। কিন্তু সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদেশ সফর করলে সেটি থেকে সম্পূর্ণ নিজেকে বিরত রেখেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। জি-২০ সম্মেলন ও জলবায়ু সম্মেলনের মতো বৈশ্বিক বড় সম্মেলনেও প্রেসিডেন্ট জিন পিং চীনের প্রতিনিধিত্ব করেননি।
গুরুত্বপূর্ণ দুটি সম্মেলনে যোগদান না করার যুক্তি হিসেবে বেইজিং বলছে, জিন পিং দেশের বাইরে গেলে কোভিড প্রটোকল অনুযায়ী তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ফলে তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। আর তিনি যদি কোয়ারেন্টিন প্রটোকল ভাঙেন, তবে তাকে জনগণের সমালোচনা সইতে হবে। কারণ দেশের অন্য জনগণ কোয়ারেন্টিন মানলে দেশের প্রেসিডেন্টকেও মানতে হবে।
- সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সঙ্গে এখনো দেখাই হয়নি জিন পিংয়ের। অথচ প্রতিনিয়ত তারা একে অপরকে উদ্দেশ করে পাল্টাপাল্টি হুমকি-সতর্কতা দিয়ে আসছেন।
ধারণা করা হচ্ছিলো- এবারের জি-২০ ও কপ-২৬ সম্মেলনে তাদের দেখা হবে, তবে সেটা হয়নি। কিন্তু তাই বলে চীনা প্রেসিডেন্টকে ছেড়ে দেননি বাইডেন। জলবায়ু ইস্যুতে চীনের গড়িমসি ও সময়ক্ষেপণের কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করতে চীনা অপতৎপরতার বিরুদ্ধেও কড়া ভাষায় কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছর চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কংগ্রেস। জিন পিং আশা করছেন, সেখান থেকে তাকে আরও ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হবে। ফলে, প্রথম মেয়াদে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে পরিচিত করতে জিন পিংকে যতটা আগ্রহী দেখা গিয়েছিল এখন সেই আগ্রহটা নেই। এখন অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের দিকে মনোনিবেশ করছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, উহানে লকডাউন ঘোষণার আগে জিন পিং সবশেষ মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। সেটা গতবছরের জানুয়ারিতে। তার বিদেশ সফরের ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, তিনি বছরে অন্তত ১৪টি দেশে সফরে যেতেন। যেখানে গড়ে ৩৪ দিন ব্যয় করতেন তিনি। কিন্তু মাঝখানে চীনের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পূর্বঘোষিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ সফর থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শি জিন পিং।
ইবাংলা/নাঈম/০৮নভেম্বর, ২০২১