রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র গ্যাস সংকট। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এসব এলাকায় প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিলছে না গ্যাস। কিছু কিছু এলাকায় দিনে গ্যাস মিললেও তা একবারেই চাপ-শূন্য।
ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। এরই মধ্যে আবাসিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব এসেছে। তা বিবেচনায় নিয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
আরও পড়ুন…সংসদ নির্বাচনে ২৪১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি: টিআইবি
গ্যাস সংকট নিয়মিত সমস্যা ছিল রাজধানীর মান্ডা, মানিকনগর, জুরাইন, কামরাঙ্গীচর, মালিবাগ, বাসাবো, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও মুগদা এলাকায়। তবে এখন তা ধানমন্ডি, কলাবাগান, কমলাপুর, মগবাজার, ইস্কাটন, গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকাতেও শুরু হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫-৬টা পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না। দিনের বেলায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না, রাতের রান্না করা খাবারও দিনের বেলায় গরম করা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন।
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা সানজিদা আক্তার বলেন, কিছুদিন ধরে গ্যাস একেবারেই থাকছেনা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকছে, দুপুরের মধ্যে তা একদম শূন্য। রান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে সিলিন্ডার গ্যাস নিতে বাধ্য হয়েছি।
আরও পড়ুন…ডেঙ্গুর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কর্মসূচি নেয়ার নির্দেশ মন্ত্রী তাজুলের
পশ্চিম রাজাবাজারের হিমেল দেব বলেন, কিছুদিন ধরে দিনের বেলায় গ্যাস থাকছেনা। গ্যাস এলেও তা দিয়ে পানিও গরম করা যাচ্ছেনা। আমরা ব্যাচেলার মানুষ, সকালে কাজের লোক এসে গ্যাস পায় না, রান্না না করে চলে যায়। ফলে না খেয়েই অফিসে যেতে হয়।
বাসাবো এলাকার মোহন লাল বলেন, আগে সকালের দিকে গ্যাস থাকলেও এখন সকালেও থাকছেনা। আগে ১১টার পরে আসত, এখন সেটাও বন্ধ হয়েছে।সায়দাবাদ এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, বহুদিন ধরেই গ্যাসের সমস্যা। মাস-খানেক আগে সকাল-সন্ধ্যা একটু থাকতো। এখন সেটাও আসেনা। তিতাস অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও লাভ হয়নি।
রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গ্যাসের চাপ কম থাকায় গাড়িতে পর্যাপ্ত জ্বালানি নেওয়া যাচ্ছেনা। ফলে বারবার যানবাহনগুলোকে গ্যাসের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন…‘দাফনের’ ৬ মাস পর স্বামী নিয়ে বাড়ি ফিরলেন তরুণী!
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, প্রতি মাসে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে জানুয়ারিতে চাহিদার বিপরীতে দেশে ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে, যা ২০২০ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন।
তীব্র সংকটের মধ্যেই জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আবাসিক গ্রাহকদের বিল ৫১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। বর্তমানে দুই চুলার জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা ও এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকা বিল দিতে হয়। মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মানা হলে দুই চুলার জন্য মাসে ১ হাজার ৫৯২ টাকা এবং এক চুলার জন্য ১ হাজার ৩৮০ টাকা বিল দিতে হবে।
আরও পড়ুন…অভিনন্দন জানাল জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে
এদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বিবেনায় নিয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি। দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থাকে গত সোমবার চিঠি দিয়েছে ওই কমিটি। চিঠিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের সপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের পর জানুয়ারির মধ্যেই নিজেদের সিদ্ধান্ত কমিশনকে জানাবে কারিগরি কমিটি।
সম্প্রতি গ্যাস সংকটের জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আগামী মার্চ মাস নাগাদ গ্যাসের সংকট সমাধান হয়ে যাবে। তবে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের জন্য দেশবাসীকে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের একটা টাইমলাইন ঠিক করে ফেলেছি। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সাপ্লাই থাকবে। আমরা যেভাবে বিদ্যুতে করেছি, গ্যাসের ব্যাপারেও সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।