ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতার এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে করে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন এনেছিলেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউয়ির নারী নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকো (৩৫)। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে তাঁর গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর লাগেজে তল্লাশি চালিয়ে ওই মাদক জব্দ করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, নমথান্দাজো টাওয়েরা সোকো মালাউয়ির নাগরিক এবং সেখানের একটি হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে চাকরি করেন। তিনি বাংলাদেশি কারও কাছে ওই কোকেন পৌঁছে দিতে মালাউ থেকে এসেছিলেন। কোকেন চোরাচালানে আন্তর্জাতিক চক্র বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে সোকোর মাধ্যমে এই চালান এনেছিল। গতকাল ধরা পড়া কঠিন আকারের কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান এটি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) তানভীর মমতাজ বলেন, তাঁরা জানতে পারেন, গতকাল কাতার এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে একজন আফ্রিকান নাগরিক কোকেনের একটি বড় চালান নিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরে আসতে পারেন।
তানভীর মমতাজ বলেন, ওই তথ্যের ভিত্তিতে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারীর নেতৃত্বে একটি দল বিমানবন্দরের ৮ নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে কাতার এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় যাত্রী সোকো বিমানবন্দরের নিচতলায় ভিসা অন অ্যারাইভেল ডেস্কে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন।
সোকোর গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও এপিবিএনের কর্মকর্তারা। তাঁর লাগেজে বিশেষভাবে কোকেনগুলো লুকানো ছিল। এতে সেগুলো স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছিল না। পরে লাগেজের ওজন দেখে সন্দেহ হয় মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের। সোকোও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, এর ভেতরে কোকেন আছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তানভীর মমতাজ বলেন, সোকোর লাগেজ খুলে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ সোকো বলেন, তিনি বাংলাদেশে সুই ও কাপড়ের ব্যবসা করেন। সেই কারণে গত বছর তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। গতকাল বাংলাদেশের একটি পোশাক কারখানার নিমন্ত্রণে তিনি এখানে আসেন। কোকেন নিয়ে তিনি মালাউয়ি থেকে উড়োজাহাজে ওঠেন।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশে কোকেন পৌঁছে দিয়ে সোকোর ৪ ফেব্রুয়ারি মালাউয়িয়ে ফেরার কথা ছিল। কার কাছে কোকেন দিতে এসেছিলেন এবং কোথায় এই কোকেন পাঠানো হবে, সে বিষয়ে জানতে রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জব্দ করা কোকেনের দাম ১০০ কোটি টাকার ওপরে। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সোকোর বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিমানবন্দর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে সাড়ে তিন কেজি কোকেন ধরা পড়েছিল। ২০১৭ সালেও বিমানবন্দরে কোকেনের চালান ধরা পড়ে। এরপর একটি ডগ স্কোয়াড গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের শুরুতে ডগ স্কোয়াড গঠন করা হয়েছে। এই ডগ স্কোয়াড গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্টানিল, হেরোইন ও কোকেন শনাক্ত করতে পারে।
২০১৫ সালে ১০৭টি ড্রামে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে মিশিয়ে আনা কোকেনের একটি চালান ধরা পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে একটি ড্রাম পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, ১৮৫ কেজি সানফ্লাওয়ার তেলের এক-তৃতীয়াংশই তরল কোকেন।