ঘোষণা অনুযায়ী মিরপুরের প্যারিস খালে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মিরপুরের প্যারিস খালে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এই কাজে সহযোগিতা করতে যুক্ত হয়েছেন বিডি ক্লিনের ১২০০ স্বেচ্ছাসেবী।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্যারিস খালে এই কার্যক্রমের সূচনা করেন উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

এর আগে প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠে বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীদের দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ পাঠ করান মেয়র।

পরে স্বেচ্ছাসেবীরা চারটি দলে ভাগ হয়ে খালের চারটি অংশে আবর্জনা পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করেন। একটি দলের সঙ্গে নিজেই আবর্জনা পরিষ্কারে নামেন মেয়র আতিক।

গত ৩১ জানুয়ারি আবর্জচনার পুরু স্তর জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্যারিস খাল পরিদর্শন করেছিলেন মেয়র; খালে জমা আবর্জনার ওপর দিয়ে হেঁটেছিলেন তিনি। ওইদিনই মেয়র আতিক খালটি পরিষ্কার এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

শুক্রবার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, “প্রথম ধাপে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া প্যারিস খালে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। পরিষ্কার অভিযানে আমার সাথে বিডি ক্লিনের ১২০০ স্বেচ্ছাসেবী যোগ দিয়েছে।

“দুইদিন আগে পরিদর্শনে এসে আমি সবাইকে খালের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অনেকে যার যার স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে, নিম্ন আয়ের মানুষ সময় চেয়েছে। অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য আমি তাদেরকে একমাস সময় দিয়েছি। ময়লা পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।”

এলাকাবাসীর সচেতন হওয়ায় গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “একসময় প্যারিস খাল দিয়ে লঞ্চ চলত। আর আজ সেই খাল ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লার কারণে এই খালে পানি নেই, খালের উপর দিয়ে হাঁটা যায়। এলাকাবাসীর লজ্জা হওয়া দরকার তারা এই খালটিকে ময়লা ফেলে, দখল করে গলা টিপে হত্যা করেছে।

“সবাই বলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন কিছু করে না। এলাকাবাসীকে বলতে চাই, আপনারা যদি খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করেন তাহলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। শুধু সিটি করপোরেশন না, আপনাদের নিজেদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।”

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে মেয়র বলেন, “এরই মধ্যে খালের জমি মাপা শুরু হয়েছে। খালের জায়গার মধ্যে যে বিল্ডিং পড়বে সেগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হবে। খালের জায়গায় কিছু বস্তি আছে। বস্তিবাসীদেরকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য। চাইলে আজকে বুলডোজার দিয়ে সব ভেঙে ফেলতে পারতাম কিন্তু ভাঙিনি, তাদেরকে সময় দিয়েছি। সময়ের মধ্যে না সরলে উচ্ছেদ অভিযান করা হবে।”

এসময় তিনি আরও বলেন, “এখানে কিছু কিছু জায়গায় মাদকের বাণিজ্য চলে। এখানে বড় একটি চক্র ও গ্যাং মাদকের কারবার করছে, আমার কাছে তথ্য এসেছে। অভিযান শুরু হয়েছে। এখানে ধাপে ধাপে কাজ করা হবে। প্রথমে আমরা প্যারিস খালে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে চাই। দ্বিতীয় ধাপে খালের ৪০ ফিট জায়গা উদ্ধারের পরে যে জায়গা থাকবে, সে জায়গায় ওয়াকওয়ে তৈরি করা হবে। পরে দু’পাশে আরো জায়গা পাওয়া গেলে সেখানে একটি নান্দনিক পার্ক তৈরি করব।”

অভিযানে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশংসা করে মেয়র বলেন, “স্বেচ্ছাসেবীরা আজ ছুটির দিনে স্বতস্ফূর্তভাবে খাল পরিষ্কারের জন্য ছুটে এসেছে। অথচ এই ছেলেমেয়েদের আজকে মাঠে খেলাধুলা করা কথা ছিল, বাসায় বিশ্রাম করা কথা ছিল। কিন্তু তারা খেলা, বিশ্রাম বাদ দিয়ে খাল পরিষ্কারে অংশ নিয়েছে।”

অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহে আলম, অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক প্রমুখ।