জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেছেন, ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইনের বাইরে গিয়ে তদন্ত ছাড়া আমরা এটা করতে পারি না। আমার হাতে যা আইন আছে, সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটা আইন অনুযায়ী চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।
আরও পড়ুন>> অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরকে অব্যাহতি, শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সাদেকা হালিম বলেন, এই যৌন হয়রানির ঘটনার যে অভিযোগ বা রিপোর্ট, সেটার ব্যাপারে আমি জানতাম না। জানলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিতাম। আমি শোনা মাত্রই বর্তমান প্রক্টরকে নির্দেশ দিয়েছি। আসন্ন সিন্ডিকেটে যতগুলো যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে, সব নিষ্পত্তি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় একটা আইনে চলে। আইনের সকল ধারা, উপধারা ব্যবহার করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তদন্তের জন্য জবির আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু অবন্তিকা নয়, এরআগেও বিভিন্ন যৌন হয়রানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিচার মেলেনি। এর জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সে সব ঘটনারও বিচার করতে হবে।
জবাবে উপাচার্য বলেন, আমি নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছি। এরপর থেকে যতগুলো অভিযোগ পেয়েছি সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। চলতি মাসেই সিন্ডিকেট সভায় সে সব অভিযোগের সুরাহা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
আরও পড়ুন>> প্রক্টর-সহপাঠীকে দায়ী করে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
এ সময় উপাচার্য সাদেকা হালিম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এরপর কুমিল্লার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেসবুকে পোস্টে ফাইরুজ অবন্তিকা তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হয়রানি এবং হুমকি প্রদানসহ নানা অভিযোগ করেন। সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মানহানির অভিযোগ করেন।
এ ঘটনা জানার পর উত্তাল হয়ে ওঠে জবি ক্যাম্পাস। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাস এলাকায় টায়ারে আগুন নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা সহকারী প্রক্টর দীন ইসলাম ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দীকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন।
ইবাংলা/এসআরএস