ইরানকে ঠেকাতে চীনের বিকল্প নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে।যুদ্ধ এখন কেবল ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। স্থানীয় গন্ডি ছাড়িয়ে রূপ নিয়েছে আঞ্চলিক যুদ্ধের।শেষ পর্যন্ত ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইরান থেকে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়েছে ইসরায়েলে।

দুই বৈরী দেশ যেভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে হয়েছিল সেটা হয়নি। তবে যুদ্ধ একেবারে হবে না সেটাও বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র এখনই ইরানের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছাড়া তেহরানকে রুখে দিতে ওয়াশিংটনের সামনে আর কী পথ খোলা থাকছে?

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ইরানি কনস্যুলেটে ১ এপ্রিল ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুজন সামরিক কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। ইসরায়েল যদিও দাবি করেনি, যে ঐ হামলা তারা করেছে। তবে অবস্থাদৃষ্টে এটি স্পষ্ট কারা হামলা করেছিল।

সিরিয়ায় ইরানি সেনা কর্মকর্তারা এর আগেও নিহত হয়েছিলেন কিন্তু সর্বশেষ এই ঘটনার পর এর জবাব দেওয়ার জন্য ইরানের ভেতর থেকেই চাপ তৈরি হচ্ছিল। ইরান যে কিছুটা একটা করতে চলেছে সেটা প্রায় নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিল।

প্রশ্ন ছিল তেহরান নিজে তার জবাব দেবে না আঞ্চলিক প্রক্সি (হিজবুল্লাহ, হুতি ও অন্যান্য মিলিশিয়া গ্রুপ) দিয়ে সেটা করবে। সবার জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৩ এপ্রিল তেহরান নিজেই সেটার প্রত্যুত্তর দেয়। যদিও হামলায় ইসরায়েলের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আঞ্চলিক পর্যায়ে যুদ্ধের উত্কণ্ঠা ভালোভাবেই ছড়িয়ে দিতে পেরেছে ইরান। দেশটির ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) পরিচালিত অভিযানের নাম ছিল অপারেশন ট্রু প্রমিজ।

মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ইরানের সেনা কর্মকর্তারা এর আগেও নিহত হয়েছেন। কিন্তু দেশটিকে তার জবাব দিতে দেখা যায়নি। যেমন ২০২০ সালের জানুযারিতে ইরাকে মার্কিন হামলায় ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাশেম সুলায়মানি নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা যায়।

এছাড়া ডিসেম্বরে সিরিয়ায় আইআরজিসির আরেকজন কমান্ডার রাজি মুসাভি নিহত হয়েছিলেন। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছিল এ ধরনের হামলার জবাব দেওয়ার সক্ষমতা তেহরানের আদৌ আছে কি না। যাহোক, ইরান শেষ পর্যন্ত কিছু একটা করে।

দেখিয়েছে এবং ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্য সংকট বৃহত্তর পরিসরে ভাবতে বাধ্য করেছে। ইরানের এই হামলা গাজার যুদ্ধে বিপন্ন নারী, পুরুষ ও শিশু থেকে সাময়িকভাবে হলেও বৈশ্বিক মনোযোগ অন্যদিকে সরে গিয়েছিল।

ইরানকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে চাপে রাখতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে চীনের সহযোগিতার বিকল্প নাই। যদিও রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের অনুরূপ সুসম্পর্ক আছে, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য এ নিয়ে মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের এই মুহূর্তে আলোচনায় বসা সম্ভব নয়।

লক্ষণীয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত সপ্তাহে চীন সফর করেছেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে তিনি দেশটি দ্বিতীয় বার সফর করলেন। চীন ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ওয়াশিংটনের সিনিয়র কর্মকর্তারা এমন কি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পর্যন্ত প্রকাশ্যে তেহরানের ওপর রাশ টেনে ধরতে বেইজিংয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন।

গত বছর নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠককালে বাইডেন এ ব্যাপারে তার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ওই সময় লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজ টার্গেট করে হুতি বিদ্রোহীরা আক্রমণ শুরু করেছিল।

‘ইরানের বৈদেশিক বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ চীনের সঙ্গে হয়ে থাকে। একারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চীন ইরানের স্বার্থের বিষয়টি দেখে থাকে’ বলেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিডল ইস্ট প্রোগ্রামের পরিচালক জন অলটারম্যান।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় চীন একমাত্র দেশ যা ইরানের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখে।’ এদিকে ২২ এপ্রিল মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ইরান-চায়না এনার্জি স্যাংশন অ্যাক্টটি পাশ হয়েছে। বিলটির লক্ষ্য চীনের যেসব কোম্পানি ইরানের অশোধিত তেল আমদানি করবে তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা।

নিউজার্সি থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেস সদস্য জশ গোটেইমার এদিন বলেন, ইরান চীনে তেল রপ্তানি করে প্রতিদিন ১৫০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় চীন যেন এ ব্যাপারে ইরানের রাশ টেনে ধরে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীন সেরকম কিছু করবে তার সম্ভাবনা খুবই কম। চীন যদিও হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ করতে তেহরানকে অনুরোধ করে সেটি তার নিজের স্বার্থের জন্য করবে, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো পশ্চিমা দেশের জন্য নয়।

ইবাংলা বাএ

ঠেকাতে চীন বিক্লপনায়