নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২০২৬ সাল থেকে। আর ২০২৭ সাল থেকে শুরু হবে একাদশ শ্রেণিতে। ২০২৬ সালে যারা এসএসসি পাস করবে তারা নতুন পদ্ধতিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে।
যদি কোনো শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়, সে চাইলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। একবার নয়, সে দুইবার পরীক্ষা দেওয়া সুযোগ পাবে।
সূত্র থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৮ মে) কারিকুলাম উন্নয়ন ও পর্যালোচনা সংক্রান্ত কোর কমিটিতে নতুন কারিকুলামের বেশ কিছু সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো– দুই বিষয়ে ফেল করেও একাদশে ভর্তি হওয়া।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আচরণকে মূল্যায়নের আওতায় আনা, সাত স্কেলে মূল্যায়ন, মূল্যায়নে ৬৫ শতাংশ লিখিত, কার্যভিত্তিক ৩৫ শতাংশ, ক্লাসে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি থাকার বিষয়টিও পাস হয়েছে। এটি এখন এনসিটিবি বোর্ড সভা হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় চূড়ান্ত হবে। তারপর সবার জন্য প্রকাশ করা হবে।
কারিকুলাম পর্যালোচনা কোর কমিটির একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী এসএসসিতে এক বা দুই বিষয়ে ফেল করলে তার শুধু ওই দুই বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না।
নতুন কারিকুলামে কলেজে ভর্তি হওয়ার হওয়ার সুযোগের বিধান রাখা হয়েছে। একসঙ্গে সে একাদশে ক্লাস চালাবে এবং অনুত্তীর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা দেবে। শুধু তাই নয়, সে পরের দুই বছর এ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া একাদশে ভর্তি হয়েও মানোন্নয়নের জন্য এক বা একাধিক বা সব বিষয়ে পুনরায় পাবলিক মূল্যায়নে (এসএসসি) অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান জানান, বর্তমানে এসএসসিতে এক বা দুই বিষয়ে ফেল করলে শুধু সেই বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কলেজে ভর্তি হতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীর জীবন থেকে এক বা একাধিক বছর চলে যায়।
নতুন কারিকুলামে কেউ এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে সে একাদশে ভর্তি হয়ে ওই সব বিষয়ে ফের পরীক্ষা দেবে। এতে তার দুটি কাজ একসঙ্গে চলবে।তিনি বলেন, কোর কমিটিতে এসব প্রস্তাব পাস হয়েছে। এখন এনসিসিসি সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সেখানে চূড়ান্ত হলে সবাইকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান, যেকোনো কারণে একজন শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয়ে খারাপ ফল করতেই পারে। সেজন্য তার পরবর্তী স্তর আটকে থাকতে পারে না। কোর কমিটির এ সিদ্ধান্ত খুবই ভালো উদ্যোগ। এতে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে না।
এদিকে, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আচরণগত বিষয়গুলোও মূল্যায়নের আওতায় আনা হবে। তার আচরণের নম্বর বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতা ও পারদর্শিতার নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে। স্বাভাবিক মূল্যায়নের মতো আচরণের মূল্যায়নেও সাতটি স্তর বা সূচক থাকবে। রিপোর্ট কার্ডে আচরণিক ক্ষেত্র নামে আলাদা একটি ছক থাকবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এ মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা।
‘আচরণ’ বলতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর আচরণ, দলগত কাজে অংশগ্রহণ, আগ্রহ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হবে। শিখন কার্যক্রম চলার সময় এ আচরণগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন শিক্ষকরা। এরপর আচরণিক নির্দেশিকায় তা দেওয়া হবে।
নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীর অর্জন সাতটি স্কেল বা সূচকে মূল্যায়ন করা হবে। সাতটি স্কেলের জন্য থাকবে সাতটি ছক। সেগুলো হলো– অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’।
বলতে বোঝানো হবে শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর অর্জন করেছে। আর ‘প্রারম্ভিক’ স্তর হলো সবচেয়ে নিচের স্তর।৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে মোট ১০টি বিষয় থাকবে। সেগুলো হলো– বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি।
২০২৩ সাল থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। আগামী বছর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ শিক্ষাক্রম চালু হবে।