অবৈধ উপায়ে বানানো ট্রাকে সয়লাব রাঙামাটিতে; রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি

আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ উপায়ে বানানো ট্রাকে সয়লাব হয়ে পড়েছে দেশের রাস্তাগুলো। পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে এই ধরনের অবৈধ জোড়া লাগানো চেসিস এর ট্রাকই বেশির ভাগ বলে জানিয়েছে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। রাঙামাটি থেকে চলাচলকারি এসব ট্রাকের উপর সর্বাত্মক জরিপ চালানো নাগেলেও পরীক্ষা করে দেখা গেছে অনেকগুলো ট্রাক বে-আইনীভাবে জোড়া লাগানো চেসিস দ্বারা বানানো হয়েছে। এতে যেমন দূর্ঘটনার ঝুকি বাড়ছে, তেমনি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে।

আরও পড়ুন…মোদি-বাইডেনের ফোনালাপে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ

সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকরে জানাগেছে, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভাঙ্গারি হিসেবে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের পুরাতন বাতিল গাড়িগুলোর চেসিসকে কেটে দুই টুকরো করে সেগুলোকে (ইস্ক্রাব) হিসেবে দেশে প্রবেশ করানো হয়। এরপর দেশীয় চট্টগ্রামের একটি চক্র সেসব চেসিস সংগ্রহ করে সেগুলোকে জোড়া লাগিয়ে নির্দিষ্ট্য সাইজের বাইরে আরো বড় করে বডি বাধিয়ে রাস্তায় নামায়।

পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের একটি অসাধু চক্রের সাথে আতাঁত করে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে উক্ত অবৈধ চেসিস কাটা গাড়িগুলোকে বৈধ ফিটনেস সংগ্রহ করে ট্রাক মালিকদের একটি অংশ। এছাড়াও এসব ট্রাক-মিনি ট্রাক চলাচলে রাঙামাটি থেকে শুরু করে রাউজান, হাটহাজারী, অক্সিজেন, চট্টগ্রাম হাইওয়ে থেকে শুরু করে ফেনী, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ, যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত অন্তত ২০ পয়েন্টে চাঁদা দিয়ে এসব ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়িগুলো চালাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় এই ধরনের অন্তত শতাধিক ট্রাক-মিনিট্রাক রয়েছে, যেগুলো কাটা চেসিস জোড়া লাগিয়ে বানানো হয়েছে। এসব গাড়ি দিয়ে রাঙামাটি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে কাঠ পরিবহন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল পরিবহন করা হয়।

এই ধরনের গাড়ির কারনেই কাঠ ব্যবসায়িসহ অন্যান্য ব্যবসায়িরা প্রায় সময়ই ধরাশায়ী হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ ব্যবসায়ি নেতারা। ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়িদের অভিযোগ, ডিস্ট্রিক গাড়ি এবং কাটা চেসিস এর গাড়িগুলো আমরা অনেক সময় চিনি না। যার ফলশ্রুতিতে আমরা যখনই ভাড়া নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাই, পথিমধ্যে আমাদের গাড়িগুলো আটকিয়ে তিন থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় সংশ্লিষ্ট্য চেকপোষ্টের সংশ্লিষ্ট্য শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয়রা গাড়ি ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, পরিবহণ সেক্টরের প্রভাবশালী নেতাদের মালিকানায় চলাচল করছে কাটা চেচিস এবং ফিটনেস বিহীন ট্রাকগুলো। তারা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এবং অবৈধ চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিআরটিএ থেকে নকল কাগজপত্র সংগ্রহ করে এসব ট্রাক রাস্তায় চালাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট্যদের নির্দিষ্ট্য হারে টাকা পরিশোধ করেই অবৈধ ট্রাকগুলো রাস্তায় নামিয়েছে।

আরও পড়ুন…বিএনপি ‘জাতীয় সরকার’ ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা করতে চায়: তারেক রহমান

রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ি সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, আমরা রাঙামাটি ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেকান্দরকে বিষয়টি আগে থেকেই অবহিত করে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছি যে, আমাদের কাঠ পরিবহনে কোনো ধরনের আনকম্পিলিট গাড়ি দিবেন না। এসব গাড়ি নির্দিষ্ট্য জেলায় চলাচল করবে, এগুলো ঢাকায় নিয়ে গেলে ব্যবসায়িরা হয়রানির স্বীকার হয়।

এদিকে, বিষয়টির আংশিক স্বীকার করে রাঙামাটিস্থ জেলা ট্রাক মিনিট্রাক মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমাদের সমিতিতে এই ধরনের গাড়ি নাই এটা আমি বলবো না, তবে সেগুলো হাতে গোনা কয়েকটি। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট্য কর্তৃপক্ষকে হয়তো কিছু দিয়ে এসব গাড়ি চালাচ্ছে। এই ধরনের গাড়িগুলোর মালিকরা বেশির ভাগই রাঙামাটির নয় মন্তব্য করে তারা জানান, এসব গাড়ির মালিকদের বিরাট একটি অংশ রানীরহাট-রাউজান ও হাটহাজারি এলাকার। তাদের গাড়িগুলো রাঙামাটি থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে।

রাঙামাটি ট্রাক মালিক সমিতির তথ্যানুসারে অন্তত ৬ শতাধিক ট্রাক-মিনিট্রাক রাঙামাটিতে রয়েছে। এসবের বিপরীতে মালিকদের চারটি এবং চালক শ্রমিকদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। এই সাতটি সংগঠন এর সবগুলো মিলে রাঙামাটিতে জেলা ট্রাক মিনিট্রাক মালিক-শ্রমিক যৌথ কমিটি নামক আরো একটি সংগঠন করা হয়েছে। জেলা ট্রাক মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, রাঙামাটি থেকে সারাদেশে প্রতিনিধি গড়ে দুই শতাধিক গাড়ি চলাচল করছে। তাদের দাবি তারা এসব ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
সমিতির এক নেতা জানান, আমাদেরই কিছু সদস্যের মালিকানাধীন কাগজপত্র বিহীন ট্রাকগুলোকে বৈধতা দিতে গিয়েই পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট্য অনেকগুলো ক্ষেত্রে চাঁদা দিয়ে ঠান্ডা রাখতে হয়।

আরও পড়ুন…বৈষম্যবিরোধী ই-ক্যাবের চা-চক্র অনুষ্ঠিত

মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা বৈধ উপায়ে ব্যবসা করতে চাই। তারা বলেন, একটি তিন টনবাহী মিনি ট্রাক সরকারী রাজস্ব দিয়ে আনতে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা খরছ হয়। সে জায়গায় জোড়া চেসিস এর একটি মিনি ট্রাক বানিয়ে রাস্তা চালাতে খরছ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। এতে করে সরকারকে প্রায় ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

এই ধরনের অবস্থায় রাঙামাটিতে চলাচলকারি শতাধিক ফিটনেস বিহীন ও জোড়া লাগানো চেসিসের ট্রাকগুলোর কারনেই বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারছেনা সরকার। সরকারী সংশ্লিষ্ট্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় না থাকাসহ আইন প্রয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছে মালিক-সমিতির নেতারা।

ইবাংলা/ আইএইচ