দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার মধ্যে দিয়ে দেশের ৮৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদ । এ পর্যায়ে ২৬টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। এদিকে নির্বাচনী সহিংসতায় বিভিন্ন এলাকায় হামলা ও দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় লেলাং ইউপি নির্বাচনে দুই সদস্য প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শফি ( ৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
দেশব্যাপি ভোট কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে উপজেলার লেলাং ইউপির ৮ নং ওয়ার্ডের তোফায়েল আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী জামাল পাশা ও ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী মুরাদের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শফি নিহত হন।
তবে নিহত শফি কার সমর্থক ছিলেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী বলেন, শফি উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ফটিকছড়ির লেলাং ও কাঞ্চন নগর থেকে আহত অবস্থায় আরও ১০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। নরসিংদী নরসিংদীর রায়পুরায় ইউপি নির্বাচন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার বাঁশগাড়িতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- বাঁশগাড়ি এলাকার হেকিম মিয়ার ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩০), একই এলাকার জাহাঙ্গীর (২৬) ও দুলাল মিয়া (৫০)।নরসিংদীর সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিত কুমার ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাঁশগাড়ি ইউপিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আশরাফুল হক সরকার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইল ফোন প্রতীকের জাকির হোসেন। এটা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
বুধবার সন্ধ্যায় দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সারা রাত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। ভোরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দুইজন। পরে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে সালাউদ্দিন মিয়া (৪০) নামে একজনের মরদেহ পৌঁছেছে। সালাউদ্দিনের স্ত্রী আকলিমা আক্তার বলেন, ভোরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার স্বামী মারা যায়। নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) হারুনুর রশিদ বলেন, নরসিংদী জেলা হাসপাতালে একজনের মরদেহ আর নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে আরেকটি মরদেহ আছে।
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় মানিকারচর ইউপি নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওন নামে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মেঘনা থানার পরিদর্শক তদন্ত জাকির হোসেন বলেন, আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে শাওন নামে একজন হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কক্সবাজার কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউপি নির্বাচনে ভোট চলাকালে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আক্তারুজ্জামান পুতু (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আরও ছয়জন আহত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ায় ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, নিহত আকতারুজ্জামান খুরুশকুল ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী (বর্তমান মেম্বার) শেখ কামালের ছোট ভাই।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিএসসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনায় মেম্বার প্রার্থী শেখ কামালসহ কয়েকজন আহত হন। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে আহত আকতারুজ্জামান পুতুকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কেন্দ্রে পরপর জোড়া ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পরে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র থেকে সংঘর্ষ ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোটরসাইকেল প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ইউনিয়নের খলিলনগর সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান অসলেসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। এছাড়া বৈকারী ইউনিয়নের কাথন্ডা জলিল মেম্বারের বাড়ির সামনে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর মাঝে সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
ইউপি সদস্য প্রার্থী আব্দুল জলিলের ভাই ইমরান হোসেন জানান, প্রতিপক্ষ ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী মহসিনের কর্মী-সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউপি নির্বাচনে ৩নং ওর্য়াডের আন্ডারচর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। পরে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ১০টার দিকে সাহেবরামপুর ইউনিয়নের আন্ডারচর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সর্দার এবং আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুল আহসান সেলিম এলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
পরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন অন্তত শতাধিক বোমা বিস্ফোরণ করে ভোটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাব ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাময়িক ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে বিবেচনা করে ভোট নেওয়া হবে।
শরীয়তপুর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন করায় হামলা, ভাংচুর অন্তত ১০টি বাড়িতে তান্ডব চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা, আহত ১২জন। সদর উপজেলার তুলাশার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িতে হামাল করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জামাল হোসাইনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উপরগাঁও হাছেন দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে ভোর সাড়ে ৬টায় দিকে হামলা হয়। এ সময় দুজন ইউপি সদস্য প্রার্থীর বাড়িসহ ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর আগে দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু পরে ঘোষিত তফসিলের তালিকা থেকে একটি ইউপি বাদ দেওয়া হয়। স্থগিত করা হয় সাতটি ইউপির ভোট। এছাড়া সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় পাঁচ ইউপিতে ভোটের গ্রহণ করা হয়নি।
ইসির তথ্য মতে, দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮১, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৩ ও সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ইসি জানায়, এই ধাপের ইউপিতে মোট ভোটকেন্দ্র ৮ হাজার ৪৯২টি।
মোট ভোটার এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৪ লাখ ৫ হাজার ৮৩১ জন এবং নারী ভোটার ৮১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৬ জন। চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩১০ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৮ হাজার ৭৪৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। তিন পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রার্থী।
ইবাংলা/টিআর/ ১১ নভেম্বর ২০২১