বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের হতাশা এবং অসন্তোষের কোনও অন্ত নেই। দীর্ঘদিন ধরে তারা অভিযোগ করে আসছেন, এই প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি ও হয়রানির চক্রে আবদ্ধ। হাজার হাজার শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ কার্যক্রমে গড়িমসি, ভুয়া সনদ তৈরির অভিযোগ এবং গণবিজ্ঞপ্তি জারিতে কালক্ষেপণ—এসব বিষয়েই তারা অভিযোগ তুলছেন।
২০০৫ সালে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। চাকরিপ্রত্যাশীরা একাধিক ধাপে আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে তারা অনেক সময় আছেন অব্যবস্থাপনার শিকার। প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি এবং অন্যান্য খরচ গিয়ে দাঁড়ায় কয়েক হাজার টাকায়। মো. হেলাল পারভেজ নামক এক প্রার্থী বলেছেন, সনদ পাওয়ার পরও তাকে ৪০০ পদের জন্য আলাদা আবেদন করতে হয়েছে, যা থেকে তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
চাকরির জন্য আবেদন করে প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে প্রার্থীদের মধ্যে আন্দোলনও শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ৪০ হাজার শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার পরও অনেক চাকরিপ্রত্যাশী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আন্দোলনের মাধ্যমে নিজের দাবি আদায়ের জন্য তাদের অনেকেই অসহ্য কষ্ট সয়ে ২০০ দিনের অনশন করেছেন।
নিয়োগপ্রক্রিয়ার দুর্নীতিঃ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে এনটিআরসিএর একটি গাড়িচালকের (জিয়া) বিরুদ্ধে কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগও ওঠে। স্থানীয়দের মতে, এনটিআরসিএ’তে টাকার বিনিময়ে নম্বর বাড়ানো কিংবা সনদ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে অভিযোগ উঠেছে সারা দেশে ৬০ হাজার শিক্ষক জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষক নিবন্ধনধারীগন এই দাবি তুলে এনটিআরসিএর (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, তাদের রোল এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে এনটিআরসিএ এসব জাল সনদ ইস্যু করেছে।
এনটিআরসিএর পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যা শিক্ষাব্যবস্থায় নৈরাজ্য এবং অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে, তারা এখনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাদের চাকরি কেন এখনও নিশ্চিত করা হয়নি এবং জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ কেন নীরব?
এ অবস্থায়, প্রশ্ন উঠছে যে, এনটিআরসিএ কিভাবে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সঠিকতা ফিরিয়ে আনতে কত দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষক সমাজ এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এই জাল সনদের বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
শিক্ষার গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, জরুরী ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে নিয়োগবঞ্চিত শিক্ষকদের চাকরি নিশ্চিত করা এবং জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিকতা ও সঠিকতার প্রতিষ্ঠা জরুরি, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং উন্নত শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।
সম্প্রতি, এনটিআরসিএ’র নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার যোগদানের পরেও বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত, যা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এনটিআরসিএ বিলুপ্ত করে নতুন বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) গঠনের পরিকল্পনা করেছে। এটি সরকারি কর্ম কমিশনের আদলে হবে এবং এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন কমিশন গঠনের উদ্যোগ এ সমস্যা সমাধানের দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে।
এনটিআরসিএর কার্যক্রমে দুর্নীতি এবং হয়রানির চিত্র স্পষ্ট, যা চাকরিপ্রত্যাশীদের জীবনে সংকট সৃষ্টি করছে। যদি সরকার ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধনধারীগনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় হতাশা ও অসন্তোষ চলতেই থাকবে।