ভারতীয় সিগারেট পাঁচারকালে রাঙামাটিতে ষ্ট্রেডফার্স্টের গাড়িসহ আটক-২

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি

পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ সিগারেট কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে রাঙামাটি শহরে এনে বিভিন্ন ছদ্মাবরনে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর মাধ্যমে লক্ষ কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট পাচার করছে চোরাই সিন্ডিকেট চক্র। রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা বহুল পরিচিত কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে ব্যবহার করে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আতাঁত করে চোরাই সিন্ডিকেট চক্র প্রায় প্রতিদিনই রাঙামাটি থেকে পাচার করছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটির মানিকছড়ি চেকপোষ্টে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালণা করে প্রায় ৯ লাখ টাকার সিগারেটসহ ষ্ট্রেডফার্ষ্ট কুরিয়ার সার্ভিসের একটি ছোট কাভার্ট ভ্যানগাড়িসহ দুইজনতে আটক করেছে রাঙামাটি সেনাজোন কর্তৃপক্ষ।

আটককৃতরা হলো- ষ্ট্রেডফার্ষ্ট কুরিয়ার রাঙামাটি শাখার ইনচার্জ জোনাল ম্যানেজার পিয়েল চাকমা ও সহকারী ম্যানেজার তারেকুল ইসলাম। এসময় তাদের কাছ থেকে অবৈধ শুল্কবিহীন অরিস ও ওমেগা ব্রান্ডের প্রায় ৯ লাখ টাকার সিগারেট পায় অভিযানকারীরা। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রাঙামাটি শহরের হাসপাতাল এলাকায় অফিস নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস পরিচালনা করছে ষ্ট্রেডফার্ষ্ট নামক একটি কুরিয়ার কোম্পানী।

এই কোম্পানীর গাড়িতে করে জনৈক রাজীব ত্রিপুরা ওরফে এভেন্টেস শাহআলম নামের এক ব্যক্তি রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে ০১৩২১………৭৪১ এই নাম্বার উল্লেখ করে এসকল অবৈধ সিগারেট বুকিং প্রদান করে। চট্টগ্রামের হাটহাজারির জনৈক মেসার্স শতরূপা বস্ত্রালয় ও ফয়সাল বস্ত্রবিতান হাটহাজারি শাখা থেকে এসকল অবৈধ সিগারেট বুঝে নেওয়ার তথ্য ষ্ট্রেডফার্ষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হয়। ষ্ট্রেডফার্ষ্ট কুরিয়ারের অফিসে গিয়ে উপরোক্ত তথ্যাবলি তাদের কম্পিউটারে পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উক্ত অফিসে কর্তব্যরত কর্মকর্তা শুভ্রদেব চাকমা জানিয়েছেন, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, উক্ত কার্টুনগুলোর মধ্যে কাপড় রয়েছে। তাই আমরা এগুলো বুকিং নিয়েছি।

চেক করার নিয়ম থাকলেও মার্সেন্ট কাষ্টমার হওয়ার সুবাধে প্রতিদিন চেক করা হয়না বলেও জানিয়েছেন ম্যানেজার শুভ্র। প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল কম্পিউটারে চেক করে দেখা যায়, রাঙামাটি শহরের তবলছড়ির বাসিন্দা রাজীব ত্রিপুরা নাম দিয়ে ০১৩২১………৭৪১ দিয়ে ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে গত ১৫/০৮/২০২৪ ইং তারিখ হতে ৩/১০/২০২৪ইং পর্যন্ত অন্তত ১১ বার কাপড়ের কার্টুন উল্লেখ করে ভারতীয় সিগারেট পাঁচার করেছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার গাড়ি আটকের পর বুকিংকারি ও প্রাপক উভয়ের উল্লেখকৃত মুঠোফোন ০১৩২১………৭৪১ ও ০১৩০৬…..৩৪৮ নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলাধীন ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে ভারতীয় সিগারেট গত ছয়মাস ধরেই নিয়ে আসছে একটি সুবিশাল সিন্ডিকেট চক্র। নানান মহলকে ম্যানেজ করে এই চক্রটি বর্তমানে ভারতীয় সিগারেট বোটে করে এনে বালুখালীতে ষ্টক করে।

এরপর সেখান থেকে সেগুলোকে বিশেষভাবে কার্টুনে ভরে রাঙামাটি শহরে নিয়ে আসে। শহরের আসামবস্তি, তবলছড়ি, পুরানবস্তি, পোড়াপাহাড়, ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন, মানিকছড়ি এলাকায় রাতের অন্ধকারে এবং ঠিক দুপুর বেলায় শহরের পৌরসভা থেকে কাঠাঁলতলি এলাকা, বনরূপা এলাকায়, সকাল বেলায় রিজার্ভ বাজার এলাকায় বিভিন্ন পরিবহণের কাভার্ড ভ্যান, কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্সের গাড়ি ও মিনি পিকআপের মাধ্যেমে কখনো বিস্কুটের কার্টুন, বসুন্ধরা টিস্যুর কার্টুন, কাপড়ের কার্টুন ও বস্তায় বিশেষভাবে প্যাকেটিং করে অবৈধ সিগারেট পাচাঁর করে আসছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই সিগারেট পাচারকারিরা রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা দিয়ে সিগারেট পাচাঁরের নতুন রুট সৃষ্টি করেছে। রাঙ্গুনিয়া, রানীরহাট ও সুপারমিল এলাকায় তিন দফায় পাচারকারিদের বিপুল পরিমান সিগারেট স্থানীয়রা আটক করলেও অন্তত ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে উক্ত সিগারেটগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে এই চক্রের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে রাঙামাটি সদর জোন কর্তৃপক্ষ। এতে করে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট আটক করা হয়।

ইবাংলা/ আই/ রা

পাঁচারকালেভারতীয়সিগারেট