ভারতের দুই রাজ্য হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটের ফলাফল প্রকাশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সেই ফলাফল বলছে, হরিয়ানায় জিতলেও জম্মু-কাশ্মীরে পরাজিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। মুসলিম প্রধান এই রাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে জম্মু-কাশ্মির ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএনসি)।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে ৪২টি আসন জিতেছে ফারুক আবদুল্লাহ এবং তার ছেলে ওমর আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন দল জেকেএনসি। বিজেপি পেয়েছে ২৮টি আসন এবং কংগ্রেস ৮ আসনে জয় পেয়েছে। বাকি ১২টি আসনে জয়ী হয়েছে অন্যরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জম্মু-কাশ্মীরে প্রয়োজনীয় ৪৬টি আসনে জয় না পেলেও সরকার গঠনে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না ন্যাশনার কনফারেন্সকে। কারণ জেকেএনসি এবং কংগ্রেস উভয়ই বিজেপিবিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’র শরিক দল।
অন্যদিকে, হরিয়ানায় ৯০ টি আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। যেখানে সরকার গঠনে প্রয়োজন ৪৬টি আসন। এই রাজ্যে কংগ্রেস জয় পেয়েছে ৩৬টি আসনে, বাকি ৫টি আসনে জয়ী হয়েছে অন্যান্য দল। বুথফেরত জরিপগুলো কংগ্রেসকে আশা দেখালেও রাজ্যের মানুষ শেষ পর্যন্ত ভরসা রেখেছে বিজেপিতেই।
হরিয়ানার বিধানসভায় গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ২০২১ সালের কৃষক আন্দোলনকে ঘিরে অবশ্য রাজ্যে দলটির ভাবমূর্তি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই এই নির্বাচনে ভোটাররা সদয় হবেন কি না— তা নিয়ে সংশয় ছিল বিজেপির। ফলাফল প্রকাশের পর সেই সংশয় কেটে গেছে।
জম্মু-কাশ্মিরে জেকেএনসির ফলাফলকে ‘মহাকাব্যিক’ বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক। কারণ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসিত রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করে নয়াদিল্লিতে আসীন কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মিরজুড়ে বিক্ষোভ ডেকেছিল জেকেএনসি।
সে সময় দলটির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিলেন। সেই অবস্থা কেটে যাওয়ার পর এ জয়কে জেকেএনসির বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর এই প্রথম জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেকোনো মূল্যে এই নির্বাচন জিততে চেয়েছিল বিজেপি। জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গঠন করা ছিল বিজেপির স্বপ্ন। তাই এই রাজ্যে নিজেদের সুবিধার জন্য রাজ্য দ্বিখণ্ডকরণ, নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর পুনর্বিন্যাস, হিন্দু এলাকার আসন বৃদ্ধিসহ নানা ফন্দিফিকির করেন নরেন্দ্র মোদি।
তাই অনেকে বলছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের এই ভোট নরেন্দ্র মোদির অগ্নিপরীক্ষা। নানা হিসেব নিকেশ ও সমীকরণ মিলিয়ে বিজেপির জন্য কিছুটা আশাও হয়ত তৈরি করতে পেছিলেন তিনি। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনী ফলাফলে বিজেপিকে হতাশ হতেই হল।