প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আলোচনায় আশাবাদী বৈষম্যের শিকার ১-১২তম নিবন্ধিতরা

এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত (১-১২তম) নিয়োগ প্রত্যাশী শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে এনটিআরসিএ’র বৈষম্যের শিকার ১-১২তম ব্যাচে নিবন্ধিত শিক্ষককেরা।

তারা বলেল,- বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) গঠিত হয় ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এনটিআরসিএ’র কাজ ছিল শুধু প্রত্যয়ন প্রদান করা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হতো। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ (স্বজনপ্রীতিও ঘুষবাণিজ্য) কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এনটিআরসিএ-কে নিয়োগ সুপারিশের অনুমতি দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে উত্তীর্ণদের সম্মিলিত তালিকা প্রকাশিত হয়।

১-১২তম, বিশেষ ১০তম এবং ১৩তমদের নিয়ে জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ১-১২তমদের (এন্ট্রিলেভেল মার্ক-৪০ পেলেই নিয়োগ যোগ্য বিবেচিত হওয়ায়) অতিরিক্ত মার্কের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। হাইকোর্টের নির্দেশে তালিকা আপডেটের নামে পর্যায়ক্রমে ১-১৭টি ব্যাচের সকলকে এড করা হয়। কিন্তু সুপারিশ প্রাপ্ত ইনডেক্সধারীদের তালিকা বর্হিভূত করা হয় না। এদিকে সুপারিশ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএ’র হাতে আসায় ১৩তম, ১৪তম, ১৫তম, ১৬তম ১৭তমরা প্রতিযোগিতা করে বেশি নাম্বারসহ উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায় এবং প্রায় সকলেরই নিয়োগ হয়ে যায়।

আমির আসহাব বলেন, ধরা যাক- ‘ক’ নামক ব্যক্তি স্কুল ও কলেজ উভয় নিবন্ধনের বিপরীতে আবেদন করেছে। ‘ক’-এর আবেদনকৃত কলেজ শাখার ৯টি প্রতিষ্ঠান এবং স্কুল শাখার ১১ টি প্রতিষ্ঠানে পদ ফাঁকা থাকে। ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতেও শিক্ষক চাহিদার আবেদন নেওয়া হচ্ছে ঐ ফাঁকা পদগুলোর জন্য। এক আবেদনের ৪০টি চয়েজ এর মধ্যেই যদি পদ ফাঁকা থাকে তাহলে ‘‘ইয়েস অপশন’’ রাখার যৌক্তিকতা কী? এছাড়াও একাধিক ব্যক্তির এবং একাধিক ব্যাচের একই বিষয়ের একই রোল রয়েছে। রোল একই হওয়ায় এনটিআরসিএ লোক চক্ষুর অন্তরালে সুপারিশ সুপারিশ খেলা খেলে থাকে, প্রকৃত পক্ষে উচ্চমার্কের ব্যক্তি বারবার সুপারিশ প্রাপ্ত হন এবং একই রোলের বাকিরা প্রতিবারই নিয়োগ সুপারিশ বঞ্চিত হয়। এ রকম গল্প শুধু ‘ক’-এর একার নয়। নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণদের সনদ প্রদান করে সনদ প্রদানকে ব্যবসায়ে রূপান্তর করেছে এনটিআরসিএ। এছাড়াও একাধিক ব্যক্তির এবং একাধিক ব্যাচের একই বিষয়ের একই রোল রয়েছে। রোল একই হওয়ায় এনটিআরসিএ লোক চক্ষুর অন্তরালে সুপারিশ সুপারিশ খেলা খেলে থাকে, প্রকৃত পক্ষে উচ্চমার্কের ব্যক্তি বারবার সুপারিশ প্রাপ্ত হন এবং একই রোলের বাকিরা প্রতিবারই নিয়োগ সুপারিশ বঞ্চিত হয়। এ রকম গল্প শুধু ‘ক’-এর একার নয়। নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণদের সনদ প্রদান করে সনদ প্রদানকে ব্যবসায়ে রূপান্তর করেছে এনটিআরসিএ।

জিএম ইয়াছিন বলেন, এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যানের ড্রাইভার ও সিস্টেম অ্যানালিস্ট দায়িত্বশীলদের যোগসাজসে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে উচ্চ মার্কের সনদ প্রদান এবং নিয়োগ সুপারিশ করে প্রকান্তরে বৈধ সনদধারীদের নিয়োগ বঞ্চিত করে রেখেছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীত্রয়ের কুট-কৌশলে, একেক সময় একেক প্রজ্ঞাপন, প্রশ্ন ফাঁস এবং আপিল বিভাগের রায়কে ভায়োলেন্স করে সরকার দলীয় অবৈধ ৬০ হাজার সনদধারীদের চাকরির সুযোগ করে দিয়েছেন। ভুয়া মুক্তি যুদ্ধার চেয়ে অধিক ক্ষতিকর অবৈধ সনদ ও আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অবৈধ শিক্ষক দ্বারা শিক্ষাক্ষেত্রকে কলুষিত করেছেন, অপর দিকে প্রকৃত মেধাবীদের করেছেন বঞ্চিত।

একটি জাতীয় দৈনিকে (‘‘রিটে না মেরিটে’’ শিরোনামে) প্রকাশিত রিট মামলায় অংশগ্রহণকারীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে, জাল সনদ প্রদানকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে, সব শর্তে উত্তীর্ণ নিবন্ধিত শিক্ষকদের একটা (১-১২তম) অংশের সাথে প্রকান্তরে প্রতারণা করেই যাচ্ছে এনটিআরসিএ। ১২ জুন ২০১৮ তারিখের আগে যারা নিবন্ধন সনদ পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের ৩৯০০/২০১৯ রায় অনুযায়ী বয়সসীমা শিথিলযোগ্য এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে, সনদের মেয়াদ পাঁচ বছর বাক্যটি বিলুপ্ত করে, আজীবন করা হয়। বিষয়টি উল্লেখ্যপূর্বক এনটিআরসিএ ইতোমধ্যে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে এমপিও নীতিমালা অনুসারে ৩৫ ঊর্র্ধ্বদের শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। যোগ্যতার সব শর্তে উত্তীর্ণদের এন্ট্রিলেভেল বয়স বিবেচ্য হচ্ছে না, যাদের ক্ষেত্রে বয়স শিথীলযোগ্য সেটাও মানা হচ্ছে না।

যথেষ্ট শূন্যপদ থাকার পরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আর্থিক লেনদেনের উদ্দেশ্যে সিষ্টেম-দুর্নীতির মাধ্যমে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। পদ ফাঁকা থাকুক বা রাখা হোক, আবেদন করেও যারা সিস্টেম-দুর্নীতির কারণে নিয়োগ বঞ্চিত তাদের তাদের বয়স কী থেমে থাকবে? তাছাড়া নিবন্ধিতদের এন্ট্রিলেভেন বয়স কেন বিবেচ্য নয়, সেটা বড়ই রহস্যজনক।

আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে শাহবাগ থেকে লংমার্চ টু যমুনা ঘোষণা করেন নেতা কর্মীরা। তৎক্ষণাৎ পুলিশ প্রশাসন আন্দোলন স্থান থেকে ৫ জনের একটি প্রতিনিধি(আমির আসহাব, জি এম ইয়াছিন, আল মুমিন, মোস্তফা কামাল এবং আসমাউল হুসনা এলিজা) মাননীয় প্রধান উপদেষ্ঠার কার্যালয়ে সাক্ষাতের ব্যাপারে সহযোগিতা করে।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্ঠার শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাঁরপক্ষ হতে প্রধান উপদেষ্ঠার এপিএস সাব্বির হোসেন-এর সাথে আন্দোলনকারীদের আলোচনা হয়। আলোচনায় এনটিআরসিএ’র নিবন্ধিত শিক্ষকেরা এনটিআরসিএ’র সিস্টেম-দুনীর্তি এবং নিয়োগ বঞ্চিত করার নানা অভিযোগ তুলে করে ধরেন। এনটিআরসিএ’র বৈষম্যের শিকার ১-১২তম ব্যাচে নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের সমস্যা দূরীকণের ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় নিমোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরেন।

১. ১-১২তম ব্যাচের ডাটাবেস আলাদা করতে হবে। ২. ১ম থেকে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকৃতদের ডেমো আবেদন নিয়ে প্রকৃত চাকরি প্রত্যাশী প্রত্যেককেই স্ব স্ব নীতিমালায় নিয়োগ সুপারিশ করতে হবে। নিবন্ধিত শিক্ষকদের ব্যাচভিত্তিক নিয়োগের দাবির যৌক্তিকতা ও কাগজপত্র প্রধান উপদেষ্ঠার এপিএস সাব্বির হোসেন- মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পৌঁছে দিবেন এবং শিক্ষা ও শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য দূরীকরণে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন। আন্দোলনকারী এনটিআরসিএ’র বৈষম্যের শিকার ১-১২তম ব্যাচে নিবন্ধিত শিক্ষককেরা এ আলোচনায় আশাবাদী হয়ে আন্দোলন স্থগিত করে ঘরে ফিরে।