পাবনায় অনুষ্ঠিত পাবনা টাউনহল মাঠ জনসভায় পাবনা শহরে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চে গর্জে উঠলেন জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন পাবনা অঞ্চলের পথনির্দেশক, টিপু বিশ্বাস। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অন্যতম মুখ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।
জনসভায় টিপু বিশ্বাস বলেন, তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়েই গেছেন। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের পতন হলো। ৫২, ৬৯ , ২৪ সালের আন্দোলনে অনেকেই জীবন দিয়েছেন। জনগনের অধিকার আদায় কখনই ত্যাগ ছাড়া হয়না। ৭১’এ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন দিয়ে বাঙ্গালী জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছে কিন্তু জনগনের সত্যিকারের অধিকার বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন ইউনুস সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তারা এ সরকারকে সমর্থন করেন কিন্তু এটা জনগনের সরকার নয়। স্বল্প সময়ের সরকার।
তিনি জানান, ৭২ স্বালে স্বাধীন দেশের একটি সংবিধান রচনার জন্য সংবিধান সভার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা তা না করেই ইচ্ছামতো সংবিধান রচনা করেছেন। তাই তারা সেটা না মেনে নতুন সংবিধানের দাবী করেন।
টিপু বিশ্বাস তার বক্তব্যে একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের পর যারা দেশকে শাসন করেছে, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নিজেদের স্বার্থে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু আমরা একনায়কতন্ত্র, ফ্যাসিস্ট ও স্ম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘জাতীয় গণফ্রন্ট একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের মানুষের অধিকারের লড়াই চালিয়ে যাবে।’’
জনসভায় উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজারো নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। জাতীয় গণফ্রন্ট পাবনা জেলার সমন্বয়ক হাসিবুর রহমান হাসুর সভাপতিত্বে ও আব্দুস শুকুরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, জাতীয় কৃষক খেতমুজুর সমিতির জেলা কমিটির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুল কৃদ্দুস, ওহিদুজ্জামান ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা অন্তর হোসেন প্রমুখ। টিপু বিশ্বাসের বক্তব্যে সবাই একমত পোষণ করেন এবং দেশের উন্নতির জন্য একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং তার নেতৃত্বে এক নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
টিপু বিশ্বাস বলেন ৭১ সালে তারা যখন পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন শেখ মুজিব ইচ্ছাকৃত পাকিস্তানী আর্মিদের কাছে আত্মসমর্পন করে পাকিস্তানী কারাগারে শান্তিতে ছিলেন। এ্টা জাতির সাথে চরম বেঈমানী করেছেন তিনি। স্বাধীনতার যুদ্ধে এত মানুষ জীবন দিলেও আওয়ামীলীগের প্রথম সারির কোন নেতা জীবন দেননি। জনগণের অভূত্থানের মাধ্যমেই আবার জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।
এছাড়া, টিপু বিশ্বাস জনগণের সরকার, ৭২ সংবিধান বাতিল, কালা-কানুন রদ এবং রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি, রেশনিং, সিন্ডিকেট ভাঙ্গা, শ্রমিকের মজুরী-ট্রেড ইউনিয়ন-নিয়োগপত্র, খাস জমি ও অ কৃষক এর জমি ভুমিহীনদের মধ্যে বিলিবন্টন, গণমুখী শিক্ষা, চিকিৎসা এবং সবশেষে ফ্যাসিস্টদের দোসর রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবি করে জনমত তৈরির আলোচনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন পাবনা অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। টিপু বিশ্বাস তার সময়ের সাহসী পথপ্রদর্শক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘‘আজও দেশের উন্নয়নের জন্য যে সংগ্রাম চলছে, তাতে জনগণের শক্তি এবং সাহসই হবে সফলতার মূল চাবিকাঠি।’’
আজকের জনসভা থেকে স্ম্রাজ্যবাদ ও একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে আরও শক্তিশালী আন্দোলনের প্রস্তুতির বার্তা দেন টিপু বিশ্বাস।
জাতীয় গণফ্রন্ট পাবনা জেলার সমন্বয়ক হাসিবুর রহমান হাসুর সভাপতিত্বে ও আব্দুস শুকুরের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, জাতীয় কৃষক খেতমুজুর সমিতির জেলা কমিটির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক আব্দুল কৃদ্দুস, ওহিদুজ্জামান ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় নেতা অন্তর হোসেন প্রমুখ।