রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে বসবাসরত প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দার আতঙ্ক কারেন্ট দুলাল ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ। কারেন্ট দুলাল মাত্র ৪টি মিটার নিয়ে কয়েকশো পরিবারকে কারেন্ট সাপ্লাই দেয় অবৈধভাবে।
ডেসকোর স্থানীয় সংশ্লিষ্ট অসাধু লাইন ম্যান ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে গভীর সখ্যতা করে অবৈধ কারেন্ট সাপ্লাই দিয়ে লাখ লাখ টাকা প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে দুলাল গং। সূত্র বলছে, প্রতি বাড়ি থেকে মাসিক ৮ থেকে ১০ হাজার কোথাও কোথাও তার অধিক কারেন্ট বিল আদায় করেন তারা।
আরও পড়ুন…দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
এই কারন্টে দুলালদের অপতপরতার দৌরাত্ব এখানেই শেষ নয়, সরকারি জায়গা দখল করে রিকশার গ্যারেজ কাচা বাজার মাদক-বাণিজ্য নারী ব্যবসার সাথেও জড়িত রয়েছে কারেন্ট দুলাল। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের নেতাদের নানাভাবে ম্যানেজ করে তার আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখে দুলাল।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সমর্থিত একটি পরিবারের উপর কারেন্ট দুলাল সন্ত্রাসী চক্রের ন্যাক্কারজনক হামলা মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও প্রমাণ মিলছে। সরেজমিনে ভুক্তভুগি পরিবারের অভিযোগে জানা গেছে, ওই পরিবারের তিন নারীর উপর অমানবিক নির্যাতন ও হামলা চালিয়েছে। হামলার এক নারীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে হামলাকারিরা ।
হামলা নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয় নি কারেন্ট দুলালের লোকজন। ভুক্তভুগিদের বাড়ির ওয়াসার লাইন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এমনকি রান্না করার চুলা পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়। চাপ প্রয়োগের একপর্যায়ে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার মধ্যস্থতায় এবং গণমাধ্যম কর্মীদের চাপের মুখে সেই সংযোগগুলো পুনরায় স্থাপন করে দেয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কারেন্ট দুলালের সাথে জড়িত ফর্মা সুমি ওরফে পাপিয়া। স্বেচ্ছাসেবক দল ইউনিট সভাপতি কামাল দুলাল ও সুমির মাদক বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে যেখানে যা প্রয়োজন তাই ব্যবহার করে। ফর্মা সুমি ছদ্মনাম পাপিয়া ব্যবহার করে এহেন অবৈধ কর্মকান্ড করে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে।
এদের সাথে জড়িত স্থানীয় এক যুবদল নেতা সজীব। তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ট বলে প্রচার করে এসব অনৈতিক কাজের সহযোগি হিসেবে সেল্টার দিয়ে যাচ্ছে বলে বস্তিবাসী জানায়। জানা গেছে সজীবের প্রভাব বিস্তার করছে পুরো বস্তি এলাকায়। সজীব বিএনপি’র প্রভাব বিস্তারে বস্তিতে আতঙ্ক তৈরি করেছে। যার ফলে সাধারণ বসবাসরত বস্তিবাসী অস্বস্তিতে দিনযাপন করছে।
স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা আক্ষেপ করে এ প্রতিবেদককে বললেন এসব নেতার কারণে আগামীতে বিএনপির ভোটসহ জনসমর্থন কমে যাবে। তাই এসব নেতাদের অবিলম্বে বহিষ্কার করা উচিত। জানা গেছে ফর্মা সুমি ওরফে সুরমা ও ওরফে পাপিয়া তার স্বামী রানা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগসাজ করে বস্তিতে এমন কোন অনৈতিক কাজ নেই যা করছে না। মাদক ব্যবসা নারী দিয়ে দেহব্যবসাসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড করে চলছে কোন বাধা বিপত্তি ছাড়াই।
আরও পড়ুন…৯৯৯ এ কল করে সহায়তা চেয়ে উল্টো এক পরিবারের ৭জনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ
ফর্মার সুমি ওরফে পাপিয়ার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির অসাধু পুলিশ কর্মচারীদের সখ্যতা এবং এখানে তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই পুলিশ এবং মাস্তান বাহিনী ব্যবহার করে তাদের সকল অপকর্ম জায়েজ করে, যার ফলে বস্তিবাসী এই পাপিয়ার বিরুদ্ধে টু-শব্দ করার সাহস পান না বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
এদের সাথে যুক্ত সাততলা বস্তি ইউনিট যুবদল সভাপতি মোজাম্মেলও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাততলা বস্তি এলাকার পুরান বাজার গ্যারেজ দখল করে মানিক। পরে পিচ্চি কবির, রানা তাদের কাছ থেকে দখল করে আবারো গ্যারেজ বানায়। তারা বাজারের প্রায় ২৪ জন দোকানদারকে পথে বসিয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্রমতে জানা গেছে সুমি, রানা, কারেন্ট দুলাল আবারো বিএনপি’র পদ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। গ্যারেজ ব্যবসাসহ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ১৬ বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই দুলাল-পাপিয় গংরা। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বিভিন্ন মিটিং মিছিলে গেলেও বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছে। এবং বিএনপি নেতারা কারেন্ট দুলালকে এখন পুরোপুরি সেল্টার দিয়ে রাখছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী জানান এসব চাঁদাবাজ মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীরা আবারও যদি বিএনপিতে জায়গা করে নেয় বিএনপি’র ভোট ব্যাংকের ব্যাপক ক্ষতি হবে। দুলালের সমন্ধি সুদ ব্যবসায়ী জিয়া ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন বাড়ি দখলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চক্রবৃদ্ধি সুদ পরিশোধ করতে না পারলেই তাদের বাড়ির বিদ্যুত, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এরপর সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ওই বাড়ি দখলে নেয়। তারা বস্তি এলাকায় অটো রিক্সা চুরি করে আবার দেন দরবার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব চোরদের সাথে জড়িত ইমন, নাজমুল ও জুয়েল।
সরেজমিন অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সুমি ওরফে পাপিয়া ছিল কড়াইল বস্তিতে। সেখানে ব্যাপক মাদক বাণিজ্য ও যৌন ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় কড়াইল বস্তির লোকজন তাকে পিটিয়ে বস্তি থেকে বের করে দেয়। সুমি ঠাই নেয় মহাথালী সাততলা বস্তিতে। তাকে সুযোগ করে দেয় পিচ্চি কবির, ওমর ফারুক ও মানিক। এরা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের হয়ে বস্তিতে প্রভাব বিস্তার করলেও বর্তমানে ৫ আগস্টের পর বিএনপির ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। বলা যায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে বস্তিতে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, পিচ্চি কবির গ্রুপ ও ইলিয়াস যুবলীগ নেতা সোহেলের সাথে সিন্ডিকেট করে সকল অপকর্মে জড়িত। এরা সকলেই বিএনপি নেতা সজীবের লোক বলে এলাকায় পরিচয় দেয়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইবাংলাকে জানান, সজীব তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ লোক বলে বস্তি এলাকায় পরিচয় দেয়।
তবে এসব বিষয়ে জানবার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, পিচ্চি কবির প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আমি এ বিষয়ে বা কোন কিছুর মধ্যেই জড়িত নই। স্থানীয় ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি কামাল মুঠোফোনে বলেন, আমি বিগত ১৬ বছর বিএনপি করার কারণে মামলা হামলার স্বীকার হয়েছি। আমার ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়েছে। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।কারেন্ট দুলাল এ প্রতিবেদকের কাছে প্রথমে অস্বীকার করলেও অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ ও বাড়ি দখল ও নারী নির্যাতনের বিষয়ে স্বীকার করে বলেন এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা
বাড়ি ভাংচুর, হামলা ও বিদ্যুত, গ্যাস ও পানি বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে সংঘবদ্ধ কারেন্ট দুলাল চক্রের বিরুদ্ধে সিএমএম কোর্টে ভুক্তভুগি পরিবার মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী স্থানীয় পুলিশ ফারির ইনচার্জ এ্সআই জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তদন্তে প্রকৃত সত্য তুলে ধরব।
অনুসন্ধান চলছে আরো বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন www.ebangla.press এ।
ইবাংলা/ বাএ