রাঙামাটি শহরের হ্যাচারি এলাকায় মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে তুলকালাম কান্ড ঘটে চলেছে। দুই পক্ষের মারামারিতে আহত, মামলা, গ্রেফতার পরবর্তীতে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ, পক্ষে-বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন, পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়েই অতিবাহিত হচ্ছে রমজানের এই কয়েকটা দিন।
শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে হামলায় আহত জনৈক নুর হোসেনের পরিবার। শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন মোল্লা পাড়া এলাকায় নিজ বসত ভিটায় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নুর হোসেন।
এসময় তার পিতা-মাতাসহ আহত বোন সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত ছিলেন।এরপর এই ঘটনায় বিকেলে হ্যাচারি এলাকায় মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগীরা বলেন, হ্যাচারি ও মোল্লা পাড়া এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় জনৈক নাইট গার্ড ইসহাক ভান্ডারী ও তার পরিবারের উপর হামলা চালায় মাদক ব্যবসার অভিযোগে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন শাকিল ও তার দলবল।
গত ১১ই মার্চ রাঙামাটি শহরের হ্যাচারি এলাকার ব্রীজের মুখে এই হামলা চালানো হয়। হামলার সময় সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম সেখানে গিয়ে উভয়পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই ঘটনার পরের দিন ১২ ইং মার্চ রাঙামাটি কোতয়ালী থানায় হামলাকারি দেলোয়ার হোসেন শাকিলের নামোল্লেখ করে মামলা দায়ের করলে পুলিশ শাকিলকে গ্রেফতার করে।
এই গ্রেফতারের পরপরই ভূক্তভোগী পরিবারকে প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদান করা হচ্ছে জানিয়ে বর্তমানে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক নারী জানান, আমাকে হুমকি দেখিয়ে মাদকসেবিরা নিয়ে গিয়ে মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করেছে। আমি যদি মাদকসেবিদের বিরুদ্ধে কথা না বলতাম তাহলে আমার ছেলের উপর হামলার হুমকি দিয়েছিলো তারা। আমি আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করছি এখন, কারণ আমি এলাকাবাসীর পক্ষেই রয়েছি এবং থাকবো।
এদিকে, শুক্রবার মাদক সেবিদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে অবিলম্বে মাদক ব্যবসায়ি ও সেবিদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে হাসপাতাল, হ্যাটারি ও মোল্লা পাড়া এলাকার শতাধিক পরিবার বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে।
অপরদিকে, মারামারি মামলায় গ্রেফতার দেলোয়ার হোসেন শাকিলের পরিবার জানিয়েছে, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। শাকিলের ভাই জানায়, আমার ভাই মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলো।
মূলত কমিটি থেকে তাকে বের করা এবং হ্যাচারি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের একটি ঘোনায় মৎস্য প্রজেক্ট নিয়ে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষিদের শাস্তি হোক সেটাই চাই।
নীরিহ কেউ যাতে এই ঘটনায় অন্যায়ভাবে হয়রানী না হয়; প্রয়োজন হলে সামাজিকভাবে রাজনৈতিক বৃন্দের মাধ্যমে সামাজিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করা হোক।
উল্লেখ্য, পর্যটন শহর রাঙামাটিতে মাদকের অবাধ ব্যবহারের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে শহরের সচেতন নাগরিকদের। সম্প্রতি জেলার সর্বোচ্চ সভা হিসেবে পরিচিত আইনশৃঙ্খলা সভায় মাদকসেবী ও মাদক কেনাবেচার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রায় সকল সদস্যই অভিন্ন ভাষায় অভিযোগ উত্থাপন করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্যাপক সমালোচনা করে। উক্ত সভায় মাদক অফিসের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।