আজ ১৭ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৫তম জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান, মা সায়েরা খাতুন। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা খেতাবে ভূষিত এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে তার অসীম অবদান রয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং তিনি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্ব এবং সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয়।
এই দিনটিতে আওয়ামী লীগ সরকার থাককালীন প্রতিবছর “জাতীয় শিশু দিবস” হিসেবেও পালন করত এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম আয়োজন করা হতো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ছিল সংগ্রাম, ত্যাগ, ও সংগ্রামী মনোভাবের প্রতীক। তার শৈশব থেকেই তিনি রাজনীতি ও স্বাধীনতার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা শেখ মুজিব, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। তার ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবিত হন এবং পরে মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দিয়ে নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের মাধ্যমে তার নেতৃত্বের শুরুও হয়। তবে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, যেখানে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরো বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এবং ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়।
বঙ্গবন্ধু জীবনে বহুবার কারাগারে গিয়েছেন, পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানোর জন্য। তার ২৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রায় ১৩ বছরই তিনি জেলে কাটিয়েছেন। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি তার বেশ কিছু জন্মদিনও পালন করেছিলেন, তবে তিনি কখনোই বিশেষভাবে জন্মদিন পালন করতেন না। সাদামাটাভাবে, তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তার পছন্দের খাবার রান্না করে এবং রাজনৈতিক সহকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে জন্মদিনটি উদযাপন করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার হত্যার পরও তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল অমর থাকবেন, কারণ তার নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পেরেছিল এবং তা বাস্তবে পরিণত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল অত্যন্ত তরুণ বয়সে। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দিয়ে তিনি রাজনীতিতে পদার্পণ করেন এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার রাজনৈতিক যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল।
তার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান। এ আন্দোলনগুলো তাকে বাঙালি জাতির মধ্যে একটি বিশাল জনপ্রিয়তা এনে দেয়, এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, যেখানে তিনি বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই ভাষণ বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে এবং পরবর্তীতে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা তাকে গ্রেফতার করলেও, ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কাজ শুরু করেন। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, তার এই পুনর্গঠন প্রচেষ্টা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটে তিনি সপরিবারে নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর শোকাবহ ঘটনা।
বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনেও একাধিক বার কারাবরণ করেন। পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তিনি মোট ৪,৬৮২ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের প্রায় ১৩ বছরই তিনি জেলে ছিলেন, এবং এই সময়েই তিনি ৮ বার তার জন্মদিন কারাগারে কাটান। তার ৩০তম (১৯৫০), ৩১তম (১৯৫১), ৩৯তম (১৯৫৯), ৪০তম (১৯৬০), ৪১তম (১৯৬১), ৪২তম (১৯৬২), ৪৭তম (১৯৬৭), এবং ৪৮তম (১৯৬৮) জন্মদিনগুলো তিনি জেলে কাটিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রাম বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে, এবং তার অবদান জাতি ও দেশের প্রতি তার গভীর ভালোবাসার নিদর্শন।
ইবাংলা বাএ