সুনিতা উইলিয়ামস এবং তার সহকর্মী জনসন জেমস মহাকাশ থেকে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) থেকে প্রায় ৯ মাস পর ফিরেছেন। এই দীর্ঘ মহাকাশ মিশনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাদের ফেরার প্রক্রিয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় স্পেসএক্সের ‘ক্রু ড্রাগন ফ্রিডম’ মহাকাশযানে করে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার উপকূলে অবতরণ করেন তারা।
মহাকাশ অন্বেষণের এক ঐতিহাসিক দিন! দীর্ঘ নয় মাস অপ্রত্যাশিতভাবে মহাকাশে কাটানোর পর, অবশেষে নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস পৃথিবীতে ফিরে আসেন। তাদের এই মিশন প্রাথমিকভাবে মাত্র ৮ দিনের জন্য নির্ধারিত ছিল, কিন্তু বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের কারিগরি সমস্যার কারণে এটি দীর্ঘ নয় মাসে পরিণত হয়।
দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ অবস্থানের পর,তাদের ১৮ মার্চ ২০২৫ সালে পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে । ১৮ মার্চ ২০২৫, দুপুর ১:০৫ (ET)-এ তারা ISS থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন এবং SpaceX Crew Dragon ক্যাপসুলে করে ফিরছেন, এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্লোরিডার উপকূলে স্থানীয় সময় বিকাল ৫:৫৭ মিনিটে (ET) সমুদ্রে অবতরণ করতে পারেন।
একাধিক কারিগরি সমস্যার কারণে তাদের মিশন বারবার ব্যর্থ হয়, যার ফলে উইলমোর ও উইলিয়ামস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) পরিকল্পনার চেয়ে অনেক বেশি সময় অবস্থান করতে বাধ্য হন। তবে, এই সময়ে তারা বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে গেছেন। তাদের গবেষণা প্রতিশ্রুতি আমাদের সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণা। আমরা অধীর আগ্রহে তাদের ফিরে আসা দেখার অপেক্ষায় আছি এবং তাদের অসাধারণ সাফল্য উদযাপন করতে চাই!
২০২৪ সালের ৬ জুন এক সপ্তাহের মিশনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান বুচ ও সুনিতা। কিন্তু বোয়িংয়ের যে ক্যাপসুলে তারা যান, সেই ‘স্টারলাইনারে’ ত্রুটি দেখা দেয়। তাই নিরাপত্তার কারণে তাদের সময়মতো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রক্রিয়াটি জটিল ও কষ্টকর। মহাকাশযাত্রীরা যখন পৃথিবীতে ফেরেন, তখন অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, যা বিশেষভাবে তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটানোর পর, নভোচারীদের শরীর অনেক পরিবর্তন হয়। তাদের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যায়, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং তাদের শরীর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে সময় নেয়। মহাকাশ থেকে ফেরার আগে তাদের বিভিন্ন চিকিৎসা পরীক্ষা করা হয়, এবং বিশেষভাবে তাদের শারীরিক অবস্থা যাচাই করা হয়।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্পেসক্রাফটের প্রয়োজন। মহাকাশযাত্রীরা স্পেসক্রাফটের কেবিনে বন্দী হয়ে ফেরার জন্য প্রস্তুত হন। এটি সাধারণত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত থাকে, যেটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়।
মহাকাশযাত্রীরা যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেন, তখন তারা একটি অত্যন্ত তীব্র তাপমাত্রা এবং ঘর্ষণের মুখোমুখি হন। মহাকাশযানটি খুব দ্রুত গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, যা প্রায় ২৫,০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে হয়। এই সময়ে যানের তাপমাত্রা প্রায় ১,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তাই, স্পেসক্রাফটে অত্যন্ত শক্তিশালী তাপ শোষক প্যানেল থাকে, যা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
মহাকাশ থেকে ফেরার পর, মহাকাশযানটি পৃথিবীতে নিরাপদে অবতরণের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছায়। এটি সাধারণত সমুদ্র বা বিশেষ নির্ধারিত স্থানে হয়। যখন স্পেসক্রাফট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বিশেষ অবতরণ ব্যবস্থা এবং প্যারাশুট ব্যবহার করা হয়, যাতে ধীরে ধীরে এবং নিরাপদভাবে ভূমিতে পৌঁছানো যায়।
অবতরণের পর, নভোচারীদের অবিলম্বে চিকিৎসা পরীক্ষা করা হয়। মহাকাশ থেকে ফেরার পর তাদের শরীরে নানা শারীরিক পরিবর্তন ঘটে, এবং তারা একেবারে পৃথিবীর পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাদের হাঁটাচলা, শ্বাসপ্রশ্বাস, এবং অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপ পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এছাড়া, মহাকাশ থেকে ফেরার পর নভোচারীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেন, যাতে তারা স্বাভাবিক পৃথিবীজীবনে ফিরে আসতে পারেন। মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নভোচারীরা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিয়ে তথ্য সরবরাহ করেন। দীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে শারীরিক এবং মানসিক চাপের প্রভাব কীভাবে মানব দেহে পড়ে, তা নিয়ে গবেষণাও চালানো হয়।
মহাকাশের দীর্ঘমেয়াদী মিশনগুলি ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুনিতা উইলিয়ামস এবং তার সহকর্মী নভোচারীরা এই মিশনে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা পৃথিবীতে মহাকাশ গবেষণার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।
এই অভিযানের মাধ্যমে মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং প্রযুক্তির ভবিষ্যত উন্নতির দিকগুলো আরও স্পষ্ট হয়েছে। সুনিতা উইলিয়ামসের এই দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ যাত্রা ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের জন্য বড় ধরনের শিক্ষা এবং নতুন গবেষণার সুযোগ তৈরি করেছে।
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, এবং নভোচারীদের অভিজ্ঞতা, গবেষণা, এবং মহাকাশ অভিযানকে আরও অগ্রসর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।