সমাজসেবা অধিদপ্তরের কমিটি বাণিজ্য

আমিনুল ইসলাম/ রনি

সমাজসেবা অধিদপ্তর নীতিগতভাবে যে সব কর্মসূচি দেশব্যাপী পালন করার কথা। তার সিটে ফোটাও নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কমিটি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে সিদ্ধ হস্ত।

জানা গেছে রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উপকমিটি অনুমোদন দিতে গিয়ে পতিত আওয়ামী সরকার দলীয় লোকদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যাদের নামে বাড়ি বা ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের কমিটিতে রাখার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম নীতি।

কিন্তু স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট অথচ স্বামীকে অর্থের বিনিময়ে সোসাইটির সদস্য বানিয়েছে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে। এরকম অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ফলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রভাবশালী লোকদের নতুন করে কমিটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ থেকেও অনুমেয় হয় যে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রবিউল ইসলাম আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছেন। এমন অভিযোগ রয়েছে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর সোসাইটির বাড়ির মালিকদের।

ছবিতে বামে সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের সাথে ঐক্যৈ পরিষদের প্রধান নেতা ফেরদৌস, ডানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রবিউল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

 

সোশ্যাইটির অন্যান্য সদস্যদের অভিযোগ, অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম নিয়ম বহির্ভুতভাবে লে: কর্ণেল (অব) ইরশাদের নামে কোন ফ্লাট বা বাড়ি না থাকার পরেও তাকে (সদস্য নং ৩১২) উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর ওয়েলফেয়ার সোশ্যাইটির উপকমিটির ১ নম্বর আহ্বায়ক করা হয়েছে।

স্থানীয়রা প্রতিবেদকে আক্ষেপের সাথে জানান, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদৌসের অনুমোদিত কমিটি কিভাবে সমাজাসেবা অধিদপ্তর অনুমোন দিলেন? তাহলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রবিউল ইসলাম কি পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নিয়েছেন?

ফেরদৌউস, মাসুদ হাবিব ও লোটাস এই উপকমিটি তৈরির নেপথ্য নায়ক। ফেরদৌউসকে অর্থ আত্মসাত ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজের জন্য বিগত নির্বাচিত কমিটি তার সাধারণ সদস্য পদ স্থগিত করে ও সমিতি থেকে বহিষ্কার করে দেন। মাসুদ হাবিব বিগত ২০১৮ সালের রাতের ভোটে নির্বাচিত সাংসদ হাবিব হাসান ও নাদিম হাসানের ব্যবসায়িক পার্টনার ‌। তিনি এই এমপির প্রভাব খাটিয়ে বিনা ভোটে ১০ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতি ও ১০ নং সেক্টর মসজিদের সিনিয়র সহ সভাপতি হিসাবে বিগত কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন।

অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম প্রশাসক হিসাবে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা থাকলেও তিনি তার মনগড়া তৈরি উপকমিটির মাধ্যমে সদস্য ফরম বিক্রি করে সাধারণ সদস্য বানানোর জন্য প্রতি জনের কাছ থেকে ১২০০ এবং আজীবন সদস্য বানানোর জন্য ৫০০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোন আইনে এটা করতে পারেন বলে স্থানীয় সোশ্যাইটির সদস্যদের জিজ্ঞাসা? প্রশাসক হিসাবে এগুলো করা তার কাজ না এবং গঠনতন্ত্রের কোথাও উল্লেখ নেই বা কোন ধারা বলেই উপকমিটি এ কাজ করতে পারে না।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলোর মধ্যে হচ্ছে- দারিদ্র নিরসন কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি, শিশু সুরক্ষা মূলক কার্যক্রম, সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কার্যক্রম, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রতিবন্ধিতা সহায়ক সামগ্রী উৎপাদন কেন্দ্র।

এসব অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে ইবাংলা প্রতিবেদককে কোন সঠিক তথ্য কিংবা সঠিকতা যাচাইয়ে কোনরূপ সহযোগিতা না করে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদাউসকে দিয়ে নানা ধরণের হুমকি ধামকি দেন। এবং ফেরদাউস নিউজ ব্রেক করে দিবেন বলে শ্বাসিয়ে হুমকি প্রদান করেন।

 ফেরদৌস কক্সবাজারের সাবেক এমপি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের ঘনিষ্টজন থাকাসহ ঢাকা ১৮ আসনের এমপি খসরুর সাথে ছিলো দলীয় সম্পের্কের বাইরেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক। সখ্যতা আদলে লোকাল আওয়ামী লীগের কমিশনারের সাথে নির্বাচন পরিচালনা করার প্রমাণও রয়েছে এই  ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতসহ লোটাস ও মাসুদ হাবিবসহ আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাথে সখ্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিবেদককে হুমকিদাতা ফেরদৌস কর্তৃক আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম পূরনের প্রমাণও রয়েছে। এ বিষয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান চলছে…

ইবাংলা বাএ

অধিদপ্তরেরসমাজসেবা