ডাক্তার পরিচয়ে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট আলমগীর রোগীদের নিয়ে ভয়ংকর খেলা খেলছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুয়া ডাক্তার আলমগীর হোসেন সিদ্দিকী নিজেকে ডাক্তার বলে দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর ডেমরা থানাধীন ডগাইর এলাকায় চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা-সহ ও নানা অপরাধমূলক কাজ করে আসছেন।

অথচ তিনি একজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট! নিজেকে শিফা হাসপাতাল ও শিফা গ্লোবাল ট্যুরিজম লিমিটেড এর চেয়ারম্যান বলে দাবী করছেন। রাজধানীতে মিলন রোড হোল্ডিং নং ১৮৬/১/এ , মেলার মাঠ, ডগাইর, ডেমরায় তার বাংলাদেশের অফিস উল্লেখ করে ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে এই প্রতারণা শুরু করে।

সাধারণ রোগীদের কাছ থেকে ৫’শত টাকা ভিাজট ও আনুষাঙ্গিক খরচসহ দীর্ঘদিন ধরে প্রতরণার মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শিফা হাসপাতালের কোন সাইনবোর্ড নেই। জরাজীর্ণ একটি কক্ষে বিভিন্ন অখ্যাত কোম্পানির ঔষধসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ রাখা আছে। তিনি এর পাশের কক্ষে বসে রোগী দেখেন ও তার পাশে একটি কক্ষে তিনি অপারেশন ও মেডিকেল চেক-আপ এর কাজ করেন!তিনি তার ভিজিটিং কার্ড ও প্রেসক্রিপশন এর প্যাডে বাংলাদেশে আরেকটি অফিস এর ঠিকানা ১৫৩ ক্রিসেন্ট ইনক্লেব, গ্রীনরোড কলাবাগান ঢাকা-১২০৫।অথচ তিনি একজন মেডিকেল এ্যসস্ট্যিান্ট যা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, যার নং-ডি-১৩৭৬৯। তিনি ডাক্তার না হয়েও তাঁর নামের আগে ডাক্তার লেখেন।

এছাড়াও এই ভুয়া ডাক্তারের থাইল্যান্ডেও নাকি একটি চেম্বার রয়েছে । প্রতারক এই মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ১৭১ এম্বাসেডর হোটেল, সুকুমভিত সোই ১১, অর্থানা, ব্যাংকক-১১১০ ঠিকানা উল্লেখ করে ব্যাংককে রোগী পাঠানোর কথা বলে অনেকেরই টাকা হাতিয়েছেন, ক’দিন পরেই তিনি আবার বলেন যে এখানেই যেহেতু রোগ ঠিক হয়ে যাবে তাই আমার ব্যাংককের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ এরকম কোন প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় নাই।

নিজেকে সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে দাবি করা আলমগীর হেসেন শিফা ওয়ার্ল্ড সনোগ্রাফ রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড শিফা কনসাল্টেশন সেন্টারেও মালিক বলে ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় দেন।

মানুষের বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করা এই কথিত ডাক্তার আলমগীর হোসেন সিদ্দিকী সোনোলজিস্ট ও পুষ্টি, মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখে আসছেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে আলমগীর হোসেনের চেম্বারে তার বক্তব্য নিতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে রেগে অশ্রাব্য আচরন করেন।

তার বক্তব্য নিতে চাইলে তিনি চেম্বার থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসেন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করেন। এ সময় কথিত ডাক্তার আলমগীর হোসেনকে দেখাতে আসা বিভিন্ন রোগীরাও তার বিএম এন্ড ডিসি’র রেজিস্ট্রেশনের কাগজ দেখানোর ব্যাপারে তাকে বলেন ও আকলিমা নামের এক রোগীর আত্মীয় তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যদি ভুয়া ডাক্তার নাই হন তাহলে আপনার কাগজ দেখাতে সমস্যা কোথায়? একথা বলায় তিনি আকলিমার উপরও ক্ষিপ্ত হন ও সাংবাদিকদের মারতে আসেন।

উল্লেখ্য পতিত ফ্যাসিষ্ট সরকারের মুজিববর্ষের বিভিন্ন লোগো লাগানো রয়েছে তার অখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানে। তিনি নিজেই ডাক্তার নিজেই বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেন নিজের হাতেই করেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহ বিভিন্ন মেডিকেল চেক-আপ।

এছাড়া এম আর তথা অবৈধ গর্ভপাত এর মতো অপারেশন করেন। পাশের দুটি কক্ষেই অবৈধ গর্ভপাত করে ভ্রুন নষ্ট, এপেন্ডিসাইড এর অপারেশন করেন।অপারেশনের আগে রোগীকে অজ্ঞান করার যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পরে।

নিজেই ডাক্তার নিজে টেস্ট করেন নিজেই ঔষধ লেখেন নিজেই ঔষধ বিক্রি করেন! আলমগীর হেসেনের মতো এই ভুয়া ডাক্তার বাংলাদেশে আর কোথাও আছে কিনা এবং যা ইচ্ছে তাই করার মত এ রকমের আইন অমান্যকারী ডাক্তার হয়ে রোগীর জীবন নিয়ে খেলা ও অসংখ্য ভ্রুণ নষ্ট করার দুঃসাহস আদৌ বাংলাদেশে আর কারো আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এলাকাবাসী-সহ আগত রোগীরা।

সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে না গেলে তারা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হতেন বলে সাংবাদিকদেরকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী ও আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এই আলমগীর বিগত পতিত স্বৈরাচার সরকারের আমল থেকে স্থানীয় নেতাদেরকে ম্যানেজ করে তার এই অবৈধ চিকিৎসার নামে ব্যবসার সব কাজ চালাতেন। তিনি ৫ই আগস্ট এর পরে অন্য একটি দলের নেতার সাথে সমন্বয় করে অপচিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের জীবন নিয়ে খেলে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

মূলত আলমগীর অ্যাপেন্ডিসাইড অপারেশন, এম আর তথা ভ্রুণ নষ্ট করা-সহ চিকিৎসার নামে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই নিরিবিলি জায়গাটিকে বেছে নিয়েছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।

প্রতিনিয়ত অপরাধ করেও আলমগীরের মতো ভুয়া ডাক্তাররা লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে নিজ স্বার্থ হাসিল করার লক্ষ্যে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে।এই ভুয়া ডাক্তার আলমগীর হোসেন সিদ্দিকী বলেন, তাকে কিছু করার ক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা ম্যাজিস্ট্রেটেরও নেই।

ইবাংলা বাএ

খেলছেনখেলানিয়েভয়ংকররোগীদের