ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, ত্যাগের আদর্শ ও আনন্দ-ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো মুসলিমদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। এই বিশেষ দিনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিবস, যেখানে প্রাধান্য পায় আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা ও মানবিকতা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্মরণে পালিত হচ্ছে এই কোরবানির ঈদ।
আরও পড়ুন…রাসুল (সা.) যে দোয়া পড়তে বলেছেন আরাফার দিন
শনিবার (০৭ জুন) সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহর, উপজেলা ও গ্রামের মাঠ, ঈদগাহ ও মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের জামাত। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রধান ঈদ জামাত।
সেখানে রাষ্ট্রপতি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিশিষ্টজন এবং সাধারণ মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অন্যান্য স্থানের মত দেশের সর্বত্র ঈদের জামাত সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
🐄 কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের শিক্ষায় ঈদুল আযহার অন্যতম মূল শিক্ষা হলো আত্মত্যাগ। মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) যে আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা স্মরণে আজ মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করছেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, উট প্রভৃতি পশু কোরবানি দিয়ে মুসলিমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করছেন।
বিভিন্ন স্থানে কোরবানির জন্য পশু জবাই করা হচ্ছে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক। কোরবানির মাংস তিন ভাগ করে আত্মীয়-স্বজন, গরিব-দুঃখী এবং নিজ পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে। এই ভাগাভাগির মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় সামাজিক সহমর্মিতা এবং ইসলামের মানবিক দিক।
এদিকে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ঢাকায় প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে কাজ করছেন। নগরবাসীকেও নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদের দিন সন্ধ্যার মধ্যেই শতভাগ বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফগার মেশিন ও ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেস্টা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “ঈদুল আযহার ত্যাগের আদর্শ আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং সমাজে সাম্য ও সহানুভূতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও এবং অনলাইন মাধ্যমে ঈদ উপলক্ষে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন নাটক, টেলিফিল্ম, সংগীতানুষ্ঠান ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন ঘরে বসে।
আরও পড়ুন…লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফার ময়দান
ঈদ উদযাপনকে ঘিরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। ঈদের আগেই প্রায় ১ কোটি মানুষ রাজধানী ছেড়ে নিজ নিজ গ্রামে গেছেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করছে যাতে যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়।
দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, আনসার এবং সাদা পোশাকধারী সদস্যরা ঈদের জামাত এবং কোরবানির স্থানগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঈদুল আযহা কেবল পশু কোরবানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি একজন প্রকৃত মুসলিমের আত্মত্যাগ, সহানুভূতি, সংযম ও সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতিচ্ছবি। এই ঈদ হোক আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করার একটি মাধ্যম, এবং হোক দেশ ও জাতির কল্যাণের এক নতুন সূচনা।
ইবাংলা বাএ