ছয় দিনের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তির পর রোববার (১৪ নভেম্বর) রাত থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছিলেন গত ৭ নভেম্বর। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই শনিবার (১৩ নভেম্বর) তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করার পর এখন সিসিইউতে রাখা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন। বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার এখন বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন-চিকিৎসকরা এখন এই একটাই পরামর্শ দিচ্ছেন।
সেজন্য তাদের ভাইবোনদের পক্ষ থেকে আবারও সরকারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ বলেন, ‘এটাই আমাদের আবেদন সরকারের কাছে যে তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি ওনারা (সরকার) যেন দেয়’, বলেন সেলিমা ইসলাম।
সেলিমা ইসলামআরও বলেন, তারা যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। কোন দেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চায় পরিবার-এই প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর কাছে হবে এবং সেজন্য সিঙ্গাপুরকে তারা অগ্রাধিকার দেন। তবে যে দেশেই অনুমতি মিলবে, সেখানেই তারা নেবেন বলে জানান সেলিমা ইসলাম।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, কিডনি এবং ফুসফুসের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখন উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এবং জ্বরের কারণে তাকে হাসপাতালে সিসিইিউতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড. জাহিদ হোসেন জানান, সিসিইউতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার বিকল্প তারা দেখছেন না।
যদিও চিকিৎসকদল লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, এখানে আধুনিক চিকিৎসার সাপোর্ট বা সুবিধার ঘাটতি আছে বলে চিকিৎসকরা তাদের বলছেন।
‘তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। বুঝতেই পারছেন ২৬ দিন হাসপাতালে থেকে আসলো। আবার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই হাসপাতালে যেতে হলো’, বলেন সেলিমা ইসলাম।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, ‘তার হিমোগ্লোবিন অনেক কমে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, চলতে পারছে না।সেজন্যই আমরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে চাই।’ ‘কারণ এখানে তো ডাক্তাররা সেভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কারণ তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সুবিধা নাই’, বলেন সেলিমা।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, মানবিক কারণে জামিন বা সরকারের নির্বাহী আদেশে- যেকোনো উপায়ে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হোক, সেটা পরিবার চাইছে। সেজন্য এর আগে আবেদন নাকচ হওয়ার পরও আবার আবেদন করা হয়েছে।
কয়েকমাস আগেও খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন নাকচ করার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আইনি সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। তখন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, দুনীতির মামলায় সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় সরকার তাকে বিদেশে যাওয়া অনুমতি দিতে পারে না।
আনিসুল হকের বক্তব্য ছিল, মুক্তির এই আদেশ বাতিল করে তিনি আবার জেলে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করলে তখন তা বিবেচনার প্রশ্ন আসতে পারে। খালেদা জিয়ার পরিবার বা বিএনপি নেতারা তা গ্রহণ করেননি। এখন আবার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা এখনও আইনমন্ত্রী দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
তবে তিনি বলেন, একই ধরনের আবেদন হলে তাতে তাদের আইনগত দিক থেকে অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, সরকার চাইলে নিজেরাই মুক্তির আদেশ সংশোধন করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে।
খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দি ছিলেন। গত বছরের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়।
ইবাংলা/ ই/ ১৬ নভেম্বর,২০২১