ঢাকা ডেমরা এলাকায় অবস্থিত দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার চার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় (২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ) দারুণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
মাদরাসার পাঠদান পদ্ধতি ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিট, গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিট, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) এবং ঢাবির অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন একই মাদরাসার ৪ শিক্ষার্থী।
দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের শিক্ষকরা আন্তরিক। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান আলাদাভাবে পাঠদান করা হয়। সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির বিশেষ ক্লাসের কারণে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন।
ঢাবির খ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী মো. জাকারিয়া বলেন, শিক্ষকরা আমাদের অনেক বেশি সময় দিতেন। আমাদের কখনো প্রাইভেট পড়তে হতো না। প্রয়োজনে তারা অতিরিক্ত ক্লাস নিতেন। এমনকি ক্লাসের বাইরের কোনো সমস্যা নিয়ে গেলেও তারা কখনো বিরক্ত হতেন না। শিক্ষকদের অবদান এবং শিক্ষার্থীদের চেষ্টার ফলেই এই মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো ভালো অবস্থানে আছেন।
গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটে সর্বোচ্চ ৯৩ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে প্রথম এবং ঢাবির খ ইউনিটে ৩৬তম হওয়া মাদরাসাটির আরেক শিক্ষার্থী রাফিদ হাসান সাফওয়ান বলেন, আমাদের মাদরাসায় ইংরেজি ও বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা অনেক বেশি সহযোগিতা দেন। এখানে ১০০ নম্বরের সাধারণ জ্ঞান পড়ানো হয়।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদরাসায় ইবতেদায়ী (প্রাথমিক) থেকে শুরু করে কামিল (স্নাতকোত্তর) পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। এতে বর্তমানে শিক্ষক আছেন প্রায় ৭০ জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৭৯৭ জন।
প্রতিষ্ঠানটির গত ৬ বছরের দাখিল ও আলিম পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দাখিল ও আলিমে পাসের হার ছিল ১০০ শতাংশ। ২০১৭ সালে দাখিল ও আলিমের পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৯৮ দশমিক ৪৯ ও ৯৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৮ সালে ছিল যথাক্রমে ৯৯ দশমিক ২৭ ও ৯৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ছিল ৯৯ দশমিক ৮১ ও ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। সবশেষ ২০২০ সালে দাখিলে ও আলিমে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৯৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১০০ শতাংশ।
মাদরাসার ইংরেজির প্রভাষক মো. আব্দুল জলিল গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণত মানুষের ধারণা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ভালো না। আমরা যারা এখানে পড়াই, তারা কিন্তু পাবলিক কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়াশোনা করেই এখানে এসেছি। এখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই ২০০ নম্বরের ইংরেজি পড়ানো হয়।
এই প্রভাষক আরও বলেন, মাদরাসায় প্রতি সেমিস্টার ফাইনালের পর শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে আসে কি না, ঠিকমত পড়াশোনা করে কি না, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে কি না এসব বিষয়ে আলাদা করে মূল্যায়ন করা হয়।
ইবাংলা / এইচ / ২০ নভেম্বর, ২০২১