যে গ্রামের মেয়েরা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে ছেলে হয়ে যায়!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

বয়ঃসন্ধি ছোঁয়া পর্যন্ত জনির পরিবারের কেউই জানতেন না তাদের আদরের ছোট মেয়েটি আদপে ছেলে! বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে ধীরে ধীরে তার শরীরে ছেলেদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। যা দেখে বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সকলেই।

এ রকম ঘটনা বিভিন্ন সময়ে আমরা খবরের কাগজ কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় দেখি, ছেলে হয়ে জন্মে পরবর্তীতে মেয়েতে রুপান্তর হওয়া অথবা মেয়ে হয়ে জন্মে ছেলেতে রুপান্তর! এমন ঘটনা সাধারণ কালেভেদেই চোখে পড়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাস নামক গ্রামে এমন ঘটনা একেবারেই স্বাভাবিক। সেখানে প্রতি ৯০ জন শিশুর মধ্যে একজন বয়ঃসন্ধিকালে এমন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান।

এমনটি শুধু জনির সঙ্গেই ঘটেনি। ওই এলাকায় জনির মতো আরও অনেকে রয়েছে। সেখানে অন্তত ৯০ জন মেয়ে রয়েছেবয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যাদের মধ্যে পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে। কার্লা নামে সাত বছরের একটি মেয়েও যেমন পরবর্তীকালে কার্লোস হয়ে উঠেছিল। কেন এমন হয়? গ্রামবাসীদের অনেকে বিশ্বাস করতেনগ্রামের ওপর নাকি কোনো পুরোনো অভিশাপ রয়েছে। সে কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিজ্ঞান অন্য কথা বলে।

চিকিৎসকদের মতেজনিকার্লোস এবং তাদের মতো গ্রামের অন্য অনেক শিশু এক বিরল জিনগত রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ ডেফিসিয়েন্সি। ফাইভ আলফা রিডাকটেজ মানব শরীরের একটি হরমোন। এই উৎসেচকের ঘাটতি দেখা দিলেই এমন ঘটনা ঘটে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেনশরীরে যে জিনটি এই হরমোন তৈরির নির্দেশ বহন করে থাকেতার মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এই উৎসেচক যথাযথ পরিমাণে উৎপন্ন হয় না। ফাইভ আলফা রিডাকটেজের কাজই হলো স্ত্রী শরীরে পুরুষের বৈশিষ্ট্য বাহক হরমোন টেস্টোস্টেরনের বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করা। স্ত্রী শরীরে এটাই স্বাভাবিক জৈবিক ক্রিয়া। এর ফলেই পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় না এবং ওই ব্যক্তি একজন স্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত হন।

কিন্তু এই হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে টেস্টোস্টেরনের বিপাক ঘটিয়ে তাকে ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরনে পরিণত করার জৈবিক ক্রিয়াটি ব্যাহত হয়ে থাকে এবং শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উপস্থিতির জন্য পুরুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। এই বিরল জিনগত রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা গেছেজিনগতভাবে তারা পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তাদের মধ্যে পুরুষের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো (যেমন- পুরুষের লিঙ্গের বৃদ্ধিপেশির গঠন ইত্যাদি) প্রকাশ পায় না। তার পর ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে শুরু করে।

জনি এবং কার্লোসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই ঘটেছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যালিনাসে এই বিরল জিনগত রোগের প্রকোপ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে তুলনামূলক বেশিই চোখে পড়ে। প্রতি ৯০ শিশুর মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত। স্যালিনাসে এই রোগের প্রকোপ বেশি হওয়ার রহস্য অবশ্য আজও অজানা রয়ে গেছে।

ইবাংলা/এএমখান/২১ নভেম্বর, ২০২১

বয়ঃসন্ধিমেয়ে
Comments (0)
Add Comment