‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করে স্বাধীনতা ত্বরান্বিত করেছেন’
নিজস্ব প্রতিবেদক
কিছু সংখ্যক রাজাকার, আলবদর এবং আলসামস ছাড়া বাংলাদেশের সমস্ত জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অংশ গ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে যাতে চিহ্নিত না হয় সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরে এটিকে একটি জনযুদ্ধে পরিণত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ত্বরান্বিত করেছেন। বাঙালি একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পেয়েছিলো, এটি বাঙালির সৌভাগ্য বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকায় জিপিও মিলনায়তনে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ফিলাটেলিস্টস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ -পিএবি কর্তৃক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তিনজনকে সম্মাননা প্রধান উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক, মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম এবং মাসরুরর -উল হক সিদ্দিকী বীর উত্তম -কে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের কথা উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশ গ্রহণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন যারা যুদ্ধে গিয়েছিলাম ফিরে আসার জন্য যাইনি। মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে গিয়েছিলো। বস্তুতপক্ষে ৭ মার্চের পর থেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিলো। চিহ্নিত কিছু স্বাধীনতা বিরোধী ছাড়া এদেশের জনগণ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে এবং তথ্য দিয়েছে।
জনগণের সহযোগিতা ছাড়া যুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব ছিল না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময় এ দেশে অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ১৯৮১ থেকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বিশেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান প্রদানের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে অভাবনীয় অগ্রগতির মাইলফলক স্থাপন করেছে। করোনাকালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর তুলনায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সচল সজীব রাখতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মাননীয় মন্ত্রী তার এলাকায় ৮ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় মুক্ত রাখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে হাওরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতি দাস ও তার সহযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি জানান যে তার পাশের থানা সুনামগঞ্জের শাল্লার লুটেরা, ঘাতক ১৬১ জন রাজাকার ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে যাদেরকে পরদিন শাল্লার মুক্তিযোদ্ধারা তাঃক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডও প্রদান করে এবং ৮০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। স্বাধীন দেশে পাকিস্তানী দালাল ও লুটেরাদের এমন শাস্তিপ্রদান সেটাই প্রথম বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা শহরে ক্র্যাক প্লাটুনের একজন সদস্য হিসেবে রামপুরার উলুনে পাওয়ার স্টেশন জ্বালিয়ে, গ্যানিস ও ভোগে আক্রমণ করাসহ বিভিন্ন অপারেশনের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বাঙালি অন্ধকার থেকে আলোতে আসবে সে জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলাম। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময় এমনও সময় গেছে আমাদেরকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে।
মাহবুব উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম এবং মাসরুর- উল সিদ্দিকী যুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের লোমহর্ষক বিভিন্ন অভিযানের বর্ণণা তুলে ধরেন। তারাও বলেন যে বাংলাদেশের কিছু চিহ্নিত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস ছাড়া সমগ্র জনগোষ্ঠী যুদ্ধ করেছে। তারা জনগণ মুক্তিযুদ্ধে কিভাবে সহায়তা করেছে তার বিবরণও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক বক্তব্য রেখে ডাক অধিদপ্তর ও ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগকে ডাক টিকেটের মাধ্যমে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর ইতিহাস তুলে ধরার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিরাজউদ্দিন ফিলাটেলিক এসোসিয়েসনকে ডাক টিকেট আন্দোলন চলমান রাখার জন্য ধন্যবাদ দেন। ডাক ও টেলি যোগাযোগ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুজবি শতবর্ষের শত ডাক টিকেটের উপহার প্রদান করা হয়। একই সাথে মাননীয় মন্ত্রী একটি স্মারক খাম-সীল ও পোস্টকার্ড অবমুক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তিন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মুজিব শতবর্ষের শত ডাকটিকেটের এলবাম প্রদান করে সম্মানিত করেন। পরে এই উপলক্ষে একটি উদ্বোধনী খাম ও স্মারক ডাক অবমুক্ত করা হয়।
ইবাংলা/এইচ /২৭ নভেম্বর, ২০২১