চীন-রাশিয়া সামরিক জোট গঠন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাপান সাগর এবং পূর্ব চীন সাগর সহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত মহড়া এবং যৌথ টহল দিয়ে তাদের সামরিক সহযোগিতা প্রসারিত করবে চিন রাশিয়া। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

বেশ কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, চুক্তিটি দুই দেশের সম্পর্ককে “ডি ফ্যাক্টো অ্যালায়েন্স” বা কার্যত জোটে পরিণত করবে। চীনের জন্য, এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ যেহেতু বেইজিং সর্বদা “জোট নিরপেক্ষ” কূটনৈতিক নীতি অনুসরণ করে এসেছে।

সম্প্রতি, বেইজিং এবং মস্কো উভয়ই যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের চাপ মোকাবেলা করার জন্য নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহযোগিতা জোরদার করেছে। একটি উদাহরণ হলো রাশিয়ায় যৌথভাবে কয়লা মজুদ বিকাশের জন্য করা সাম্প্রতিক চুক্তি। রোমান ক্যাথলিক পন্টিফিকাল ইনস্টিটিউট ফর ফরেন মিশনের বার্তা সংস্থা এশিয়া নিউজের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই দিন শেষ; চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক এখন চীনের জন্য বেশি লাভজনক। তৃতীয় বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ে পারমাণবিক পরাশক্তি রাশিয়া এখন শি জিনপিংয়ের চীনে কাঁচামাল রপ্তানিকারক হিসেবে সহায়কের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হচ্ছে।

পার্থের কার্টিন ইউনিভার্সিটির (অস্ট্রেলিয়া) জাতীয় নিরাপত্তা ও কৌশলগত অধ্যায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলেক্সি মুরাভিভ অবশ্য মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে ডি ফ্যাক্টো অ্যালায়েন্স হিসেবে উল্লেখ করার মতো অতদূর গেছে বলে মনে করেন না। এর পরিবর্তে তিনি রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে রাজনৈতিক-সামরিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থাকে “প্রায় জোট গঠনের মতো” হিসেবে বর্ণনা করতে পছন্দ করেন।

এশিয়া নিউজকে মুরাভিভ বলেন, চীন-রাশিয়ার অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করা “আসছে দশকগুলোতে ইন্দো-প্যাসিফিকের ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত ল্যান্ডস্কেপ গঠনের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে।”

তার মতে, রাশিয়া এবং চীনের “প্রায় জোট গঠনের মতো” এমন অবস্থা ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত-সামরিক স্বার্থে দুই দেশের এক হওয়া থেকেই উদ্ভূত। দুই স্বৈরাচারী সরকার আসলে ওয়াশিংটনের “দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ” মোকাবেলায় আগ্রহী।

তবে মুরাভিভ মনে করেন না যে রাশিয়ান এবং চীনারা বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে যৌথ বিমান ও নৌ টহল দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে। বেইজিং ওই এলাকার ৯০ শতাংশ নিজের বলে দাবি করে।

“আপাতত, রাশিয়া-চীন যৌথ কার্যক্রম পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে যৌথ বিমান ও নৌ মোতায়েন নিয়মিত করা হবে,” মুরাভিভ বলছিলেন।

তবে তিনি এই সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেন না যে, এই অপারেশনগুলো আরও দক্ষিণে, গুয়ামের কাছে (যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনা রয়েছে) এবং সম্ভবত ভারত মহাসাগর পর্যন্ত যেতে পারে।

“রাশিয়ানরা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কার্যকলাপে সমর্থন দেখানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে” মুরাভিভ ব্যাখ্যা করে বলেন, দুই দেশ ২০১৬ সাল থেকে এই অঞ্চলে নৌ মহড়া পরিচালনা করেনি।

“মস্কো এবং বেইজিং যদি অকাস চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে দক্ষিণ চীন সাগর ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে,” কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুরাভিভ যোগ করেন।

অকাস হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি যার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ব্যবহার করে তার নৌবহরের জন্য পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন নির্মাণ করবে।

অনেক পর্যবেক্ষকের কাছে, এটিকে চীনের ভূ-রাজনৈতিক উত্থানকে ধারণ করার একটি নতুন হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয় এবং এটি মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা উন্মুক্ত করে দিতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ওই সম্পর্কের বিপরীতে, রাশিয়া চীনাদের কাছে তার সেরা (পারমাণবিক) সাবমেরিনগুলো বিক্রি করতে অনিচ্ছুক। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের সাবমেরিনগুলো অপেক্ষাকৃত কম উন্নত মানের।

ইবাংলা / আমিন/২৮ নভেম্বর ২০২১

Contact Us