কামরাঙ্গীরচরের খলিফা ঘাটের বাসিন্দা মো. আব্দুল মান্নান। ২৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ‘অ্যানি জাহান’ নামে নারী পরিচয়ে কবিরাজি করছিলেন। দেড় বছর ধরে এক কিশোরীর ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনায় বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়। মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার করা হয় নারী ছদ্মবেশী আবদুল মান্নানকে।
ওই কিশোরীর মা বাদি হয়ে গত ১৫ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। এজাহারে খাইরুন্নেছা উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা নূরবাগ পুরাতন পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
হঠাৎ একদিন কিশোরীর নানী মারা যাওয়ার পর কিশোরগঞ্জে লাশ দেখে সে ভয় পায়। এরপর থেকে তার আচারণ ছিল অস্বাভাবিক। ঢাকায় আসার পর আশেপাশের বাসিন্দাদের পরামর্শে ১০০০/১ খলিফাঘাটের আব্দুল মোতালেবের ছেলে আব্দুল মান্নানের কাছে নিয়ে যাই। যদিও আগে থেকেই মামলার বাদি মান্নাকে নারী হিসেবে জানতেন। এমনকি প্রতিবেশিরাও তাকে নারী বলে পরিচয় করিয়ে দেন।
সেখানে যাওয়ার পর ওই কিশোরীকে জিনে ধরেছে বলে জানানো হয়। জিন ছাড়াতে হলে প্রতি মঙ্গলবার রাতে কিশোরীকে তার কাছে রেখে যাওয়ার পরমার্শ দেন। মান্নানের এমন কথায় ওই কিশোরীকে সেখানে রেখে চলে আসেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। পরের দিন সকালে কিশোরীর শরিরে আঁচড়ের দাগ দেখা গেলে রাতে জিনে আঁচড় দিয়েছে বলে জানানো হয়।
এভাবে দেড় বছর পার হয়ে যায়। এরই মাঝে কিশোরীকে মা বলে সন্বোধন করতে বলা হয়। এভাবে তাদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চলতি বছরের জুন মাসে ওই কিশোরীকে বিয়ের জন্য সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারা সবাই মিলে একটি হোটেলে ওঠেন।
ওই হোটেলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা করলে বিষয়টি তার বোন মুক্তা টের পেয়ে যান। অভিযোগটি অনুসন্ধান শেষে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয় বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরাঙ্গীরচর থানার ইন্সপেক্টর সিকদার মহিতুল আলম। তিনি বলেন, ভন্ড এই কবিরাজ এখন নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ দাবি করছেন। অথচ এর আগে সে পুরুষ দাবি করে ওই কিশোরীকে বিয়ে করেছে বলে অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন। সে সময় তাকে পুরুষের মতোই পোশাকে দেখা গেছে। এখন দ্রুতই লিঙ্গ নির্ধারনের পরীক্ষা শেষে মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।
ইবাংলা/জেডআরসি/১৫ ডিসেম্বর, ২০২১