বাংলা সাহিত্যের মহারাজ সৈয়দ শামসুল হক
সাহিত্য পাতা ডেস্ক
বাংলা সাহিত্যজগতে এককথায় সৈয়দ শামসুল হকের পরিচয় ‘সব্যসাচী লেখক’ হিসেবে। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং নাটকসহ শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে। বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবই খুব সহজ কথা ও ছন্দে উঠে এসেছে তার লেখনীতে।
১৯৩৫ সালের এই দিনে (২৭ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ শমিসুল হক। খ্যাতিমান এই লেখক ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তিনি জীবনের শেষ কয়েকটা দিন দেশের মাটিতে কাটানোর জন্য লন্ডনের হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছিলেন। তার ইচ্ছানুযায়ী নিজের জন্ম-শহর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের মূল ফটকের পাশেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় তাকে।
বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে পদচারণার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে ‘সব্যসাচী’ লেখক বলা হয়। ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।
১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। তার অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে, খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, বারো দিনের শিশু, তুমি সেই তরবারি, কয়েকটি মানুষের সোনালি যৌবন ও নির্বাসিতা।
সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে– একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারাজীবন সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।
এ সব্যসাচী লেখক নাটকীয়তায় ভরা তারুণ্যে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ১৯৫১ সালে মুম্বাই পালিয়ে যান। সিনেমা প্রোডাকশন হাউজের সহকারী হিসেবে বছরখানেক কাজ করার পর ঢাকায় ফিরে আবারও লেখাপড়া শুরু করলেও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তিনি বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। যেমন– মাটির পাহাড়, তোমার আমার, কাচ কাটা হীরে, বড় ভালো লোক ছিল ইত্যাদি। তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বরে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে বিবিসি বাংলার সংবাদ পাঠক হিসেবে চাকরি করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর বিবিসি থেকে তিনিই পাঠ করেছিলেন।
সৈয়দ হক প্রথিতযশা লেখিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হককে বিয়ে করেন। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, গৌরবের অহংকার নিয়ে তার সাহিত্য রচনা করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিক ধারার সাহিত্যিক হিসেবে কাল থেকে মহাকালে ব্যাপ্ত থেকে এক অনুপ্রেরণার উৎস।
ইবাংলা/জেডআরসি/২৭ ডিসেম্বর, ২০২১