বিশ্বও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে। পাশাপাশি, মানুষের জীবনযাত্রাও উন্নত হচ্ছে। এমনকি, যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন শহর এবং দেশ তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়া এমন একটি শহর তৈরি করতে চলেছে যেখানে বন্যার কোনো প্রভাব পড়বে না। এই শহরে বসবাস করতে হলে জনগণকে দিতে হবে ভাড়াও!
তবে, এবার সৌদি আরব সবাইকে ছাপিয়ে এক বিস্ময়কর শহর তৈরি করতে চলেছে। সাধারণ শহরের তুলনায় এই শহর হবে বহুগুণ বড়। এই শহরে এমন সব সুবিধা উপলব্ধ থাকবে যা কল্পনাই করা যায় না। সুবিশাল এবং অপূর্ব এই শহর তৈরির ঘোষণা অনেক আগেই করা হয়েছিল।এই শহর নির্মাণে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে ।
জর্ডান ও মিশরের সীমান্তে একটি শহর স্থাপন করতে চলেছে সৌদি আরব। এর নাম ঘঊঙগ, যা হবে হলিউডের সায়েন্স ফিকশন ছবির মতো। স্বপ্নের মতো এই শহরে পরিষেবা দেবে রোবট, বাতাসে চলবে গাড়ি। বায়ু শক্তি ও সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে এই শহরে। শুধু তাই নয়, এখানে উড়ন্ত ট্যাক্সিও থাকবে।
সবচেয়ে বড় কথা এই শহরের নিজস্ব চাঁদ এবং নিজস্ব মেঘও থাকবে, যা থেকে পড়বে বৃষ্টিও। এই শহর তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। দ্য সান-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ২০২৫ সাল থেকে মানুষ এই হাই-টেক ঘঊঙগ শহরে বসবাস শুরু করবে। এই শহরটি লন্ডনের থেকে প্রায় ১৭ গুণ বড় হবে। এই শহরের চেয়ারম্যান হলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। শহরটি রোবোটিক্সের একটি কেন্দ্রও হয়ে উঠবে।
শহরের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সৌদি আরবের যুবরাজ সালমান এই শহরকে দুবাই, দোহা এবং কাতারের চেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চান। এই কাজের জন্য তিনি জলের মতো টাকা খরচ করতে প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই সৌদি আরব, ঘঊঙগ শহরকে সবচেয়ে হাই-টেক করার জন্য একাধিক পেশাদারকে ডেকে পাঠিয়েছে।
আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে, এই শহরে ঘর পরিষ্কারের কাজ পর্যন্ত করবে রোবট। সৌদি আরবে বৃষ্টির অপ্রতুলতার জন্যে জলের অভাব ঘটলেও ঘঊঙগ শহরে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ ক্লাউড সিডিংয়ের সাহায্যে এই শহরে মেঘ তৈরি করা হবে, যা থেকে বাস্তবিক বৃষ্টিও হবে।
“রোবট মার্শাল আর্ট”-এর সাহায্যে সৌদি আরব এই শহরের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এগুলি ছাড়াও, শহরটি তার নিজস্ব চাঁদ তৈরি করার পরিকল্পনাও করেছে, যা প্রতি রাতে ঘঊঙগ-কে তার দীপ্তিতে আলোকিত করবে।
২০১৭ সালে, সৌদি আরব রিয়াধে “ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ” প্রোগ্রামে ঘঊঙগ সিটির ঘোষণা করে। এই উপলক্ষ্যে রোবোটিক্স ফার্ম বোস্টন ডায়নামিক্সের সিইও মার্ক রয়বার্ট বলেন যে, “মেট্রোতেও নিরাপত্তার জন্য রোবট ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, নিরাপত্তা, লজিস্টিক, হোম ডেলিভারি, বয়স্ক ও অসুস্থদের যত্নের মতো কাজগুলো রোবট সহজেই করতে পারে।” ইতিমধ্যেই এই কাজগুলির জন্য একটি বড় পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের এই বৃহৎ পরিকল্পনা পৃথিবীর অন্য কোনো শহর স্থাপনের সময় কখনোই করা হয়নি।
যদিও, সৌদি আরব যে স্বপ্নের নগরী স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পথে অসুবিধাও কম নয়। প্রথমত, মুশকিল হল, যে উচ্চ প্রযুক্তির ভিত্তিতে রোবট, কৃত্রিম চাঁদ, কৃত্রিম মেঘ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে, সেগুলি আদৌ কতটা নিরাপদ হবে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত নন।
পাশাপাশি, সৌদি আরবের সামনে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাধা হলেন মানবাধিকার কর্মীরা। যারা পশ্চিমী দেশগুলির শীর্ষ সংস্থাগুলিকে সৌদি আরবের প্রকল্পে জড়িত না হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার কারণে সৌদি আরব কলঙ্কিত হওয়ার পর থেকে এই দেশ অনেক আন্তর্জাতিক কুখ্যাতি পেয়েছে। এমতাবস্থায়, দুবাই, দোহা ও কাতারে যেভাবে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে, সেখানে সৌদি আরব তার ভাবমূর্তি বজায় রেখে কিভাবে এই বিরাট শহর বানাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে
ইবাংলা / নাঈম/ ২৩ জানুয়ারি, ২০২২