বড় পাখিদের উঁচু গাছের প্রয়োজন। তবে তা হতে হবে দেশি প্রজাতির গাছ। উঁচু বা দীর্ঘদেহী দেশীয় গাছের অভাব দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে কিছু পাখিদের প্রজননে।
বৈলাম, গর্জন, চাপালিশ, গামার, তেলসুর, সেগুন, জারুল প্রভৃতি প্রজাতির উঁচু পাহাড়ি গাছেদের আর আমাদের চিরসবুজ প্রাকৃতিক বনে দেখা যায় না। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ওগুলো। সংঘবদ্ধ চোরচক্রের লোলুপ দৃষ্টি একশ্রেণির অসৎ বনরক্ষার দায়িত্বের নির্ভর কতিপয় ব্যক্তিদের সাথে একাকার হয়ে উজার করেছে এসব মূল্যবান বৃক্ষ। ফলে আমাদের জীববৈচিত্র্য আজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
এসব উঁচু গাছেদের অভাবে যে পাখিটি সবচেয়ে বেশি প্রজনন সংকটের পড়েছে তার নাম ‘তিলানাগ ঈগল’। তিলানাগ ঈগলের ইংরেজি নাম Crested Serpent Eagle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Spilornis cheela। এই পাখিটি আকারে চিলের মতো। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫৬ থেকে ৭৪ সেন্টিমিটার। ঘাড়ে তাদের রয়েছে ঝুঁটি এবং কালচে-বাদামি দেহে রয়েছে অসংখ্য সাদা তিলা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘এই পাখিটি আগের থেকে কমে গেছে এটা বলা যায়। যেমন ধরুন- আগে গ্রামগঞ্জে বড় বড় গাছ ছিল। বিশেষ করে শিমুল গাছ। ওরা বড় গাছের উপর চুপ করে বসে থাকতো। নিচ দিয়ে শিকার দেখলেই উপর থেকে নেমে এসে শিকার ধরে নিয়ে যেতো। এছাড়াও আমাদের প্রাকৃতিক বনগুলো থেকে বড় আকৃতির উঁচু বৃক্ষগুলো উজার হয়েছে। ফলে বড় গাছকে আশ্রয় করে বেঁচে থাকা পাখিগুলো সংকটের মধ্যে পড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এদের অন্যতম প্রধান খাবারই হচ্ছে সাপ। পা দিয়ে ধরে সাপকে গাছের উপর নিয়ে বা মাটিতে বসেই মেরে খায়। যার ফলে এরা কিন্তু সাপের প্রজনন নিয়ন্ত্রণের জন্য বড় একটা ভূমিকা পালন করে। শুধু গ্রামগঞ্জেই নয়, বনপাহাড় থেকেও বিশালাকৃতির গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে প্রজনন সংকটের মধ্যে রয়েছে তারা।’
প্রজনন সংকটের প্রধান কারণ উল্লেখ করে ড. কামরুল বলেন, তাদের জন্য উঁচু গাছের প্রয়োজন। প্রজনন মৌসুমে উঁচু গাছের ডালে এরা বাসা করে। আমাদের চারপাশ অর্থাৎ গ্রামগঞ্জ বা বনজঙ্গল থেকে উঁচু গাছগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। কোনো কোনো ফরেস্টে উঁচু গাছ রয়েছে; আবার কোনো কোনো ফরেস্টে তা নেই। এর ফলে এই প্রজাতির বড় পাখিগুলোর অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে।
দেশীপ্রজাতির গাছের প্রয়োজনীতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আগে আমাদের সময়ে গ্রামাঞ্চলে দেখতাম সব দেশীয় প্রজাতির গাছ। কিন্তু এখন দেশীয় প্রজাতির গাছগুলো দেখা যায় না। এখন বেশিরভাগ গ্রামেই একাশিয়া এবং ইউকিলিপটাস গাছের ছড়াছড়ি। ইউকিলিপটাস উঁচু গাছ হলেও কিন্তু পাখিদের বাসা করার জন্য এটি মোটেও উপযোগি নয়। দেশীয় গাছের অভাবে পাখিদের প্রজনন সংকট মারাত্মকভাবে দেখা দিচ্ছে।
পরিবেশ, প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের কথা বিবেচনায় রেখে আমাদের দেশীয় প্রজাতির বিশাল বৃক্ষগুলোকে কোনোক্রমেই কাটতে না দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান।
ইবাংলা/ এইচ/ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২