ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল সোনার বাংলা গড়তে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করতে হবে। মনে রাখতে হবে ডিজিটাল যুগে দক্ষ মানবসম্পদই সবচেয়ে বড় সম্পদ।
আর এজন্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির কারিগরদেরকে যথাযথ হাতিয়ার দিয়ে সজ্জিত করে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে। মন্ত্রী সোমবার স(২৮ মার্চ) ঢাকায় জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) মিলনায়তনে নায়েম পরিচালিত ১৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্যোগে আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ -এর আগে পর্যন্ত এই ভূখনণ্ড বিদেশিরা শাসন করেছে বলেই আমরা অতীতের তিনটি শিল্প বিপ্লবে শরীক হতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু একমাত্র এই মাটির সন্তান হিসেবে স্বাধীন বংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার বিপ্লব শুরু করেন।
তিনি বাহাত্তর সালে ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির দেশটিকে রূপান্তরের অসাধারণ দিক নির্দেশনা দেন ও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েও টেলিযোগাযোগ, শিল্প, বাণিজ্যসহ প্রতিটি খাতের ন্যায় শিক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন।
সেসময় ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালির শতশত বছরের পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার পথ নকশা প্রণয়ন করে গেছেন। তিনি আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করেছেন।
আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু ছিলেন বলেই এগুতে পেরেছি, স্বাধীন দেশ পেযেছি উল্লেখ করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর তিন বছর সাড়ে সাত মাসের শাসনকাল এবং শেখ হাসিনার ১৮ বছরের শাসনকাল হচ্ছে স্বাধীনতার একান্নবছরের মধ্যে অগ্রগতির সময়।
এই সময়টি প্রকৃত অর্থে লাঙ্গল জোয়াল থেকে আজকের উন্নয়নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাহেন্দ্র সময়। বাকি সময়টা ছিলো বাংলাদেশকে পেছনে নেবার সময়।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রনায়ক জনাব মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি দূরদর্শী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে ২০১৬ সালে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারনা ঘোষিত হওয়ার ৮ বছর আগে বাংলাদেশ ডিজিটাল শিল্প বিপ্লবের ঘোষণা দিয়েছে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কেবল যন্ত্র নির্ভর হওয়ায় এটি অমানবিক বলে পৃথিবীর উন্নত কোন কোন দেশ বিশেষ করে জাপান একমত হতে পারেনি। তারা সোস্যাইটি ফাইভ পয়েন্ট জিরো ধারণা ঘোষণা করেছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ পৃথিবীর দেশে দেশে অনুকরণীয় কর্মসূচি হিসেবে অনুকরণীয় হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কর্মসূচি। তিনি বলেন, ২০৩০ সালে এসডিজি‘র লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের মধ্যে স্বল্প মূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ বিষয়টি জাতিসংঘের অন্যতম একটি লক্ষ্য মাত্রা ছিলো।
সরকারের প্রজ্ঞাবান ও প্রযুক্তিবান্ধব নীতির ফলে বাংলাদেশ আট বছর আগেই তা অর্জন করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে এক এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিল আটাত্তর হাজার টাকা, ২০২২ সালে তা পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০ টাকায়।
২০০৮ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হতো মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস ২২ সালে ব্যবহার হচ্ছে ৩৪৪০ জিবিপিএস। মন্ত্রী প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণকারি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষকতার চাকুরী অন্য চাকুরী থেকে অনেক বেশি মর্যাদার। আপনারা মানুষ তৈরির কারিগর।
শিক্ষা ডিজিটাল রূপান্তরের এই কারিগর শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরে তার ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের বিকল্প নেই। প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি ডিজিটাল শিক্ষার অপরিহার্যতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অফলাইন এবং অনলাইন এ দুটির সংমিশ্রণে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তবে মনে রাখবেন এটি মিশ্রিত পদ্ধতি চূড়ান্ত সমাধান নয়-শিক্ষার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে নায়েমের ডিজি প্রফেসর ড. মোঃ নিজামুল করিম বক্তৃতা করেন।
ইবাংলা/ জেএন/ ২৮ মার্চ, ২০২২