খিলক্ষেত থানার এসআই সজীব কর্তৃক ‘মাদক দিয়ে সাংবাদিক স্বাধীনকে ফাঁসিয়ে দেয়ার’ নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে। বনানী থানার সাবেক ওসি ফরমান আলীর ‘সোর্স’ শহীদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেকই সাংবাদিক হাবিব সরকার স্বাধীনকে গ্রেফতারের নাটক মঞ্চস্থ হয়।
শহীদের সরবরাহ দেয়া এক’শ পিচ ইয়াবার (সবচেয়ে কম দামের চম্পা বড়ি খ্যাত) নীল প্যাকেটটি স্বাধীনের কাছ থেকে উদ্ধারের বানোয়াট গল্প বানানোর মূল দায়িত্ব ছিল বিতর্কিত এসআই সজীবের। তার সহায়তা নিয়ে থানারই ছয় জন ফর্মা পুরো অপকর্মটি সম্পাদন করে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
গত রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থল খিলক্ষেত বটতলী মোড়, জাহানারা কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশ সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত ১০ এপ্রিল রোববার রাত ১২টার দিকে হাবিব সরকার স্বাধীন ও তার স্ত্রী খিলক্ষেত বটতলী মোড় এলাকায় পৌঁছেন। টুকটাক কেনাকাটার জন্য তারা উত্তরপাড়া মুখী রাস্তার চা দোকানের সামনে যেতেই পুলিশ ফর্মা খ্যাত ৭/৮ জন তাদের ঘিরে দাঁড়ায়।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সংশ্লিষ্ট ফর্মারা স্বাধীন ও তার স্ত্রীকে টেনে হিচড়ে প্রায় একশ’ গজ উত্তর দিকে জাহানারা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে নিয়ে যায়। সেখানেই এসআই সজীবসহ থানার পুলিশ ভ্যানটি অপেক্ষমাণ ছিল।
প্রায় আধাঘন্টা পর স্থানীয় একটি গ্যারেজের সামনে থেকে অটো চালক মিজানুর রহমান মিজানকে ডেকে নিয়ে এসআই সজীব একটি সাদা কাগজে সাক্ষী হিসেবে সই করানোর জন্য চাপাচাপি করেন। কিন্তু মিজান কিছুই তো জানে না, দেখেওনি জানালে এসআই তখন নীল রঙের ইয়াবা ভর্তি প্যাকেটটি দেখিয়ে বলেন এগুলো স্বাধীন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
আমি তো আছি, তোমার সাক্ষী দিতে সমস্যা কী? তখন বাধ্য হয়েই অটো চালক মিজান সেই সাদা কাগজে সাক্ষর দিয়ে দ্রুতই সেখান থেকে সটকে পড়েন। গত রাতে সেই সাক্ষী মিজানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কতগুলো ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো নিজের চোখে কিছুই দেখিনি, দারোগা যা বলেছে তাই শুনেছি। উটকো ঝামেলা এড়াতে সাক্ষী হিসেবে সই দিয়েছি।’
খিলক্ষেত থানার বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তা কেবলমাত্র সোর্স বা ফর্মাদের উপর নির্ভর করেই এলাকায় নানারকম অভিযান চালিয়ে থাকেন। এসব কর্মকর্তাদের নিজস্ব তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা না থাকায় সোর্স ব্যতিত পুরোই অন্ধকারে থাকেন। এ কারণে থানাটিতে সোর্সদের বেশ কদর রয়েছে।
সেই সুবাদে ১৫/২০ জন চিহ্নিত অপরাধী সমন্বয়ে সোর্স গ্রুপ গড়ে উঠেছে সেখানে। তারাই মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের অপরাধ অপকর্মে দাপিয়ে বেড়ায়। বনানীর খুবই পরিচিত সোর্স শহীদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে খিলক্ষেতের ছয় সোর্স (ফর্মা) ও এসআই সজীব মিলেমিশে প্রভাবশালী একটি মহলের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মাদকের বিরোধিতা : ৫০০ সাংবাদিকের সর্বনাশ! সাংবাদিক স্বাধীন-ই শুধু নন, বাস্তবে মাদক বিরোধী আপোষহীন ভূমিকা নিতে যাওয়া সাংবাদিকরা কেউ রক্ষা পাননি। কোথাও পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে থামিয়ে দিয়েছে প্রতিবাদী সাংবাদিককে, আবার কোথাও সে দায়িত্ব পালনে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে মাদক ব্যবসায়ীরাই।
মাদকে সুবিধাভোগী দুই চক্রই আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের শায়েস্তা করার উদ্যোগ নিয়ে থাকে। মাদকের বাধাহীন বাণিজ্যের একচ্ছত্র সাম্রাজ্য গড়তে অভিন্ন কৌশলে কত জন সাংবাদিককে ধরাশায়ী করা হয়েছে সে ব্যাপারে সারাদেশেই খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
তবে প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাদকের বাজার গড়তে পাঁচ শতাধিক সাংবাদিকের সর্বনাশ ঘটানো হয়েছে, তছনছ করে দেয়া হয়েছে তাদের পারিবারিক, সামাজিক এমনকি কর্মময় জীবনকেও। সূত্র : Saidur Rahman Rimon এর ফেসবুক ক্লিক https://www.facebook.com/RIMON.SAIDUR
ইবাংলা/ টিএইচকে/ ১৩ এপ্রিল, ২০২২