জেলায় পালিত কোরবানীর পশু জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেহেরপুর জেলায় কোরবানীর জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬টি পশু। জেলায় কোরবানীর চাহিদা ৮৯ হাজার ৮২০টি। উদ্বৃত্ত পালন হয়েছে ৯৭ হাজার ৯৬৬টি। তবে ফের করোনার উর্দ্ধগতি ও সিলেটসহ তার আশ-পাশের জেলা বন্যা কবলিত হওয়ায় কিছুটা শঙ্কিত খামারীরা। খামারিদের মতে মেহেরপুরে পালিত কোরবানীর পশুর কুড়িভাগ সিলেট জেলার বাজারে বেচা কেনা করা হয়। বন্যার কারণে সিলেটের কোরবানীর বাজার হুমকি হয়েছে খামারীদের।
মেহেরপুর জেলায় ৪’শ টি বাণিজ্যিকসহ ২৮ হাজার পারিবারিক খামার মালিক। জেলায় পারিবারিক ও বাণিজ্যিক খামারে প্রায় ১ লাখ প্রায় ৮৮ হাজার পশু পালিত হয়েছে কোরবানীর জন্য। বছর জুড়ে খামারে পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জেলার বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, নেপালী, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। বিভিন্ন খামারীর সাথে কথা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে দেখা গেছে আনন্দ আবার কারোর কপালে চিন্তার ভাজ।
দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে দু একটি করে গরু পালন হলেও খামারে রয়েছে অনেক। বসতবাড়িতে গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারে। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে কাঙ্খিত বিক্রির সময়। স্বপ্নের গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার লক্ষ্য রয়েছে গরু পালনকারী পরিবারগুলোতে।
গাংনীর গরুর খামারী এনামুল হক জানান, গ্রাম থেকে শহর গরু পালন হচ্ছে সমানে। গ্রামের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে পরিচর্যা করেন গরুগুলো। পরম যতেœ নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয়। এ গরুগুলো তাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। পুষ্টিসম্মৃদ্ধ খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় গরুগুলো বেড়ে ওঠে কাঙ্খিত মাত্রায়। জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভুমিকা পালন করছে গরু পালন। তার খামারে আছে ৩৫টি গরু। প্রতিবছর চট্টগ্রামের ব্যাপারীরা কিনে নিয়ে যায়।
নানা রঙের স্বপ্নের জাল বোনা সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের রেবেকা খাতুন জানান- তিনি গত কোরবানীর পর ৪০ হাজার টাকায় একটি বাছুর গরু কেনেন। লালন পালনে খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা। তিনি একলাখ টাকায় গরুটি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। তারমতো ওই গ্রামে অন্তত ৩০টি পরিবারে একটি করে গরু পালন করেছেন কোরবানীর জন্য। এ গরু পালন করেই সফলতার মুখ দেখছেন তারা। করনার কারণে এবার চিন্তায় আছেন সঠিক দাম পাবেন কি না।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের খামার মালিক জিল্লুর রহমান জানান, এবার কোরবানী সামনে রেখে লাভের আশায় ৬০টি গরু ও ১শ টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন। করোনায় কোরবানীর পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় তিনি। তবে প্রশাসন অনলাইনে পশু বিক্রি করার জন্য বলছেন। তিনি বলেছেন- এবার বিনিয়োগও করেছেন প্রচুর অর্থ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ ও সিলেটের বন্যা তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। গত দুই বছর ধরে অনলাইনে পশু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল ক্দ্দুুস জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি। তিনি প্রতি বছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে গরু ছাগল কিনে ট্রাকযোগে ঢাকার পশু হাটে বিক্রি করেন। এবছর গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি হলেও পদ্মা সেতুর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা সহজ হয়েছে। কোন যানজট ছাড়াই এবার পশু বহন করা যাবে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: সাইদুর রহমান জানান, কোরবানীর জন্য এবার মেহেরপুর জেলার ৪শটি বাণিজ্যিকসহ পারিবারিকভাবে ২৮ হাজার খামারে ১ লাখ ৮৭হাজার ৭৮৬টি পশু কোরবানীযোগ্য হয়েছে। গরু ৫৮ হাজার ৩৬৩টি , মহিষ ৫৮২টি, ছাগল ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯ টি, ভেড়া ২ হাজার ৭৭২ টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় একলাখ পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত শুরু হয়েছে।
ইবাংলা / জেএন / ০৩ জুলাই,২০২২