বরিশাল জেলায় হোগল গুঁড়ি বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। শুধু হোগলাপাতা নয় হোগল গুঁড়িও প্রযুক্তির সঠিক ছোঁয়া পেলে পেতে পারে বাণিজ্যিক সফলতা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হোগলাপাতা শুধু পাতা হিসেবেই কার্যকর না।
খাদ্য হিসেবে হোগলার গুঁড়ি বেশ সুস্বাদু খাবারের মূল উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হোগলা ক্ষেতে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফুল হয়, এ ফুলে সুমিষ্ট ও সুগন্ধি এক প্রকার গুঁড়া পাওয়া যায়, এ অঞ্চলে যা হোগলার গুঁড়ি বা রেণুু নামে পরিচিত। এ হোগলার গুঁড়ি গ্রাম বাংলার মানুষের মন জয় করেছে বহুদিন আগ থেকে তা এখন শহরের রান্না ঘরে বহু সমাদৃত এবং উপদেয় খাদ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এ গাছে কোনো রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ করে না। এ রেণু বা গুড়ি বর্তমানে কৃষরা বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, চরাঞ্চলের আনাচে কানাচে স্যাঁতসেঁতে ভেজা কিংবা খাল-ডোবায় এক ধরনের লম্বা সবুজ পাতা। হোগলা গ্রামীণ পরিবেশে জন্মানো একটি বিশেষ উদ্ভিদ। অঞ্চল ভেদে এটি হোগলা, হোগল, ধাড়িপাতা এসব নামে পরিচিত। এ অঞ্চলে এমনও অনেক পরিবার বা চাষিরা আছেন যারা কেবল শুধু হোগলা চাষ করে জীবন-জীবিকা চালান। অনেক সময় এগুলো নিজেদের জমিতে চাষ করে না। নদীর ধারে যেখানে মালিকানা বিহীন জন্মে সেখান থেকে কেটে বাজারে বিক্রি করে। কেউ কেউ নিজেদের অনুর্বর জমিতে চাষ করেন।
এ বিষয়ে জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক কৃষক মো. খলিলুর রহমান ও মিজানুর হাওলাদার জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে হোগলা পাতার ফুল থেকে গুড়া সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন তারা। বাজারে প্রতি কেজি হোগলের গুড়া প্রায় ২’শ ৫০ থেকে ৩’শ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রথমে গুঁড়ি কেটে কাগজে বা পরিষ্কার কাপড়ে ১-২ দিন শুকাতে হয়। এরপর পরিষ্কার পাতিলে বা গামলার মুখে অতি পাতলা কাপড় বেঁধে গুঁড়ি আস্তে আস্তে টোকা দিতে হয়। এরপর গুঁড়ি ২ থেকে ৩ দিন রোদে শুকাতে হয়। কেউ কেউ গুঁড়ি হালকা আগুনে ভেজে নেন। তখন খুব সুঘ্রান বের হয়। শুকানো গুঁড়ি বায়ু রোধী পাত্রে বছর পর্যন্ত রেখে দেয়া যায়। প্রতিটি ফুলের মঞ্জরি থেকে প্রায় ৫০ গ্রাম গুঁড়ি পাওয়া যায়।
কৃষক আরো জানান, হোগলার ৮০-১০০ টি ফুল থেকে ১ থেকে ১.২৫ কেজি গুঁড়ি পাওয়া যায়। ১ একর জমি থেকে বছরে ৫-৮ হাজার টাকার গুড়ি সংগ্রহ করা যায়। এ গুঁড়ি থেকে মিষ্টান্ন, ফিরনি, পোলাও, হালুয়া, পায়েশ, সন্দেশ, পিঠা-পুলি, নাড়ু, বিস্কুট ও কেক তৈরি করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হারুন-অর- রশীদ বাসস’কে জানান, হোগলা পাতার ফুল থেকে তৈরি হোগল গুড়া পুষ্টিগুণ প্রচুর ও সুস্বাদু হওয়ায় এলাকায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে। সাধারণত হোগলার জমিতে কোনো প্রকার সারের প্রয়োজন হয় না। এ হোগল পাতার মাদুর দেশের সর্বত্রই পরিচিত। হোগল ফুলের রেণু থেকে এক ধরনের গুড়া হয়, দেখতে হলুদ’র গুড়ার মত। প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সাড়া জাগাতে পাড়লে দেশে-বিদেশে হোগল পাতার সামগ্রী ও এর গুঁড়া বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস বাসস’কে জানান, হোগলার বৈজ্ঞানিক নাম ঞুঢ়যধ ( টাইফা), ঞুঢ়যধপবধব (টাইফেসি)। হোগলা গ্রামীণ পরিবেশে জন্মানো একটি বিশেষ পাতা সর্বস্ব ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। হোগলা, হোগল, ধাড়িপাতা এসব নামে পরিচিত এটি। এটিকে ইংরেজিতে ক্যাটটেল বা বিড়ালের লেজ, বালরুশ, কর্নডগগ্রাস বলে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে, নিচু এলাকায় এ হোগল পাতা দেখা যায়।
হোগল পাতা নামক এ জলজ উদ্ভিদ বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের এটেঁল মাটিতে জন্মে। নদীর, খাল ও ঝিলের তীরবর্তী এলাকায় হালকা জলাবদ্ধ স্থানে বেশি জন্মাতে দেখা যায়। বেড়ে ওঠার কিছুদিন পর এ জলজ উদ্ভিদে ফুলের জন্ম হয়। আর এ ফুল থেকে তৈরি হয় এক প্রকার পাউডার যা প্রচুর পুষ্টিকর।
তিনি আরো বলেন, হোগলা পাতার নির্ভর কুটির শিল্প ও হোগল গুড়ি সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বৈদেশিক আয় আরও বেশী অর্জন করা সম্ভব।
ইবাংলা / জেএন / ০৩ জুলাই,২০২২