নড়াইলের সদর উপজেলার কর্মচন্দ্রপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটায় আহত কিশোর জুয়েল ভূঁইয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে।তার মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। জুয়েল নড়াইল উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কর্মচন্দ্রপুর গ্রামের পান্নু ভূঁইয়ার ছেলে।
রোববার (১৪ আগষ্ট) জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে। শনিবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এদিকে তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা- ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন…শোক হোক সংকট উত্তরণের শক্তি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ফাঁকাগুলি ছোড়ে। আটক করা হয়েছে ১০ জনকে। এ ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আদরের ভাই জুয়েলকে হারিয়ে বোন সুমাইয়ার আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে কর্মচন্দ্রপুর দক্ষিণপাড়ার পরিবেশ।
কোনো শান্তনাতে থামছে না তার করুণ আর্তনাদ। পরিবারের প্রিয় মানুষটির অকাল মৃত্যতে পরিবারের অন্যরাও দিশেহারা। পরিবারের মধ্যে শান্ত প্রকৃতির এ ছেলেটির এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীও।পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কর্মচন্দ্রপুর গ্রামের ইকরাম মোল্যা পক্ষ ও আতিয়ার সিকদার পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে।
এ বিরোধকে কেন্দ্র করে একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয়পক্ষ। উভয়পক্ষের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুয়েল হামলার শিকার হয় । জুয়েল বাড়ির পাশে মাদরাসা বাজারে একটি দোকানে কাজ করত। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল ৯টায় ভ্যানে দোকানে আসার পথে বেতভিটা এলাকায় পৌঁছালে কর্মচন্দ্রপুর গ্রামের ইয়াসিন, ফিরোজ, হাফেজসহ ছয় জন তাকে হাতুড়ি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে।
শুধুমাত্র দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা হওয়ার অপরাধে আতিয়ার সিকদারের লোকজন তাকে নির্মমভাবে হাতুড়িপেটা করে ফেলে রেখে যায়। এ অবস্থায় স্বজনও আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সন্ধ্যার দিকে তার মৃত্য হয়। স্বজনার এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন। এ ঘটনায় আতিয়ার সিকদার, উজ্জল শেখ, সুজন সেখ, তরিকুলের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন…সারের মজুত পর্যাপ্ত, বেশি দামে বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা:কৃষিমন্ত্রী
বাড়িঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের বাড়িঘরে ভাংচুর ছাড়াও নগদ টাকা স্বর্ণালংকার লুটে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম কামরুজ্জামান সময় সংবাদকে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গেলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে ৬ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছোড়া হয়। এ সময় হামলাকারীদের ইটের আঘাতে চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে ১০জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। তিনি আরও বলেন, জুয়েলের ওপর হামলার ঘটনায় এর আগে ৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনায় ১ জন জেলহাজতে আছে, বাকিরা আদালত থেকে জামিন পেয়েছে।
ইবাংলা/জেএন/১৪ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.