চীনে রাত্রিকালীন অর্থনীতি প্রসারিত হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

চীনে রাত্রিকালীন অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেমন ব্যবসায়ীদের মুনাফা এনে দিয়েছে, তেমনি মানুষের রাতের জীবনযাপন আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। সাধারণত নৈশ অর্থনীতির মানে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত চলা পরিষেবা ও নানা অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। গত শতাব্দীর ৮০-এর দশক থেকে চীনের কোন কোন উপকূলবর্তী এলাকায় শুরু হয় এই পদ্ধতি।

Islami Bank

২০১৯ সালে রাষ্ট্রীয় পরিষদ প্রকাশিত এক দলিলে প্রথম বারের মতো রাতের অর্থনীতি, রাতের ভোগ্য পরিবেশ গড়ে তোলার কর্তব্য উল্লেখ করা হয় । তখন থেকে নতুন দফা রাতের অর্থনীতির উন্নয়ন শুরু হয়।

আরও পড়ুন…দক্ষ জনশক্তিই উন্নত মানবসম্পদ

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত চীনা শহুরে বাসিন্দাদের ভোগের অভ্যাস তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের শহুরে ভোক্তার ৬০ শতাংশ রাতের অর্থনীতি থেকে আসে। ২০১৬ সাল থেকে চীনে রাতে অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত তার পরিমাণ হয়েছে ৩৬.৩৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। আর ২০২২ সালে তা ৪০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে।

সমৃদ্ধ রাতের অর্থনীতি চীনা ভোগ্য বাজারের স্থিতিস্থাপকতা এবং সম্ভাব্যতাকে প্রভাবিত করে। শহরের অর্থনীতির উন্নয়ন ও জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতীক এটি।

রাতের অর্থনীতির উন্নয়নের পিছনে রয়েছে স্থানীয় সরকারের দৃঢ় সমর্থন। ছু ছিং শহরের রাতের দৃশ্য খুব সুন্দর। তা দেশব্যাপী বিখ্যাত। রাতের অর্থনীতি উন্নয়নে শহর পর্যায়ের রাতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যৌথ সম্মেলন প্রতিষ্ঠিত হয়। আর জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হয় রাতের আঞ্চলিক প্রধান ও নাইট লাইফের সিইও ব্যবস্থা।

রাতের অর্থনীতির উন্নয়নে আইপিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু দিন আগে ছিংতাও বার্ষিক আন্তর্জাতিক বিয়ার মেলা সমাপ্ত হয়। অনলাইনে ৩ লাখ পর্যটন আকর্ষণ করে এ মেলা। এ মেলাও ছিংতাও-এর রাতের অর্থনীতির একটি আইপিতে পরিণত হয়েছে।

এ খাতে সরকারও আর্থিক সমর্থন দেয়। যেমন: জুলাই মাসে বেইজিংয়ে শুরু হয় ২০২২ বেইজিং ভোগ্য মৌসুম: রাতের বেইজিং অনুষ্ঠান। সরকার ১০ কোটি ইউয়ান মূল্যের কুপন বিতরণ করে এবং রাতের বেইজিং রেস্টুরেন্ট শিল্পের পুনরুদ্ধার এগিয়ে নিয়ে যায়।

one pherma

লুকআউট থিংক ট্যাঙ্ক প্রকাশিত চীনা শহরের রাতের অর্থনীতির প্রভাব প্রতিবেদন ২০১২-২০২২ অনুযায়ী, চীনে রাতের অর্থনীতি সবচেয়ে প্রভাবিত ১০টি শহর হল ছুংছিং, ছাংশা, ছিংতাও, ছেনতু,শাংহাই, বেইজিং, উহান, শেনচেন, কুয়াং চৌ ও থিয়ান চিন। উল্লেখ্য, আবহাওয়া ও অভ্যাসের কারণে উত্তর চীনের শহরে রাতের অর্থনীতির উন্নয়ন এক সময় পিছিয়ে ছিল।

আরও পড়ুন…নোয়াখালীতে ৬ দোকানদারকে জরিমানা

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর শহরের রাতের অর্থনীতির লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে বেইজিং, ছিংতাও, থিয়ান চিন ও সি’আনসহ উত্তরের শহরগুলোর রাতের অর্থনীতি সারা দেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।

রাতের অর্থনীতি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে এবং তার পদ্ধতিও পরিবর্তন হচ্ছে। আগে আমরা মনে করতাম, রাতের অর্থনীতি সাধারণত রাতের বাজার ও শপিং মলকে কেন্দ্র করে চলে। তবে তা পর্যটন, সংস্কৃতি, শপিং ও খাদ্যসহ নানা কিছুর সঙ্গে জড়িত।

ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী, রাতের অর্থনীতিকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগের চাহিদা পূরণে লাইভ অ্যাকশন রোল প্লেয়িং গেমস, বার, এবং স্টেডিয়াম। জীবন এবং অবসরের চাহিদা পূরণে হটপট, বারবিকিউ, নাইট মার্কেট ও সিনেমার কাটতি এবং আত্ম উন্নয়নের চাহিদা পূরণে বই দোকান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও থিয়েটার নৈশ অর্থনীতির মুখ্য উপাদানে পরিণত হয়েছে।

আর রাতের অর্থনীতির উন্নয়নে নতুন প্রবণতা দেখা যায়। যেমন: অবসরের পদ্ধতি আরও বৈশিষ্ট্যময় হয়ে উঠে। যুবকরা বার, কেটিভি ছাড়াও সাইকেল, ফ্রিসবিস এবং ক্যাম্পিং বেশ করে থাকে। অনলাইন কেনাকাটা ও ইন্টারনেটে স্ট্রিমারকে দেয়া টিপসও রাতের অর্থনীতির একটি অংশে পরিণত হয়েছে।

রান্নার ধোঁয়া এবং আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষের সুখী জীবন বর্ণনা করে চীনারা। রাতের অর্থনীতির আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ধোঁয়া এবং আগুন আমাদের মনের শান্তি এনে দিয়েছে সূত্র:সিএমজি।

ইবাংলা/জেএন/১৭ আগস্ট,২০২২

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us