সকল রুটে লঞ্চের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু আগের ভাড়ায়ই চলছে বরগুনা-ঢাকা, ঢাকা-বরগুনা রুটের নৌযান লঞ্চগুলো। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের মধ্যে। তবে কেবিনেট ভাড়া অপরিবর্তিত থাকলেও ডেকে জনপ্রতি ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
অপরদিকে ঢাকা বরগুনা নৌরুটে এমকে শিপিং সিন্ডিকেটের দাপটে দিন দিন জিম্মি হয়ে পড়ছে যাত্রীরা। এ পথে ছয়টি লঞ্চের রুট পারমিট থাকলেও এর মধ্যে চারটিই এমকে শিপিং লাইনস কোম্পানির। এক প্রকার লঞ্চ সিন্ডিকেটের হাতে যাত্রীদের জিম্মি হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তবে এমকে শিপিং লাইনসের মালিক মাসুম খান দাবি করেন চারটি নয়, এ রুটে একটি লঞ্চের মালিকানা তার। বাকি তিনটি লঞ্চ মিলেমিশে পরিচালনা করা হয়।
আরও পড়ুন…প্রবীণরা অধিক দীর্ঘায়ু হচ্ছেন তাদের সেবা জোরদার করতে হবে:সি চিন পিং
জানা যায়, চলতি মাসের শুরু দিকে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনাহ জ্বালানী তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেলে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে লঞ্চ ভাড়া ৩০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যা গতকাল ১৬ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা-ঢাকা নৌপথে ছয়টি লঞ্চ চলাচলের অনুমতি থাকলেও এর মধ্যে রাজারহাট-বি, পূবালী-১, শাহরুখ-২, রাজহংস-৮ এ চারটি লঞ্চ এমকে শিপিং লাইনসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমনটাই জানান এমকে শিপিং লাইনসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা। এর মধ্যে রাজারহাট-বি ও পূবালী-১ তাঁদের নিজস্ব বলে জানা যায় । রাজহংস-৮–এর মালিক বিআইডব্লিউটি‘র একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার।
এমকে শিপিংয়ের কাছে ঐ মালিক লঞ্চটি ছয় লাখ টাকায় মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেন তিনি । আর শাহরুখ-২ মাসিক ১০ লাখ টাকা ভাড়ায় চালাচ্ছে এই একই প্রতিষ্ঠান। শাহরুখ-২–‘র মালিক জানান, ১০ লাখ টাকায় তাঁরা এমকে শিপিংয়ের মাসুম খানের কাছে লঞ্চটি মাসিক ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ নৌপথের বাকি দুটি লঞ্চের মধ্যে এমভি ফারহান-৮ এর মালিক সংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু এবং অগ্নিদুর্ঘটনা কবলিত এমভি অভিযান-১০ এর মালিক হামজামালসহ চারব্যক্তি।
তদন্ত সূত্রে আরো জানা যায় বিআইডব্লিউটি এর নৌ নিট্রা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম এর সাথে এমকে শিপিংয়ের সাথে যৌথ ব্যবসায়ী পার্টনারশিপ আছে বলে জানা যায়। সে ক্ষেত্রে পরিচালক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বরগুনা নৌপথে অন্য কোন কোম্পানিকে নৌ রুট পারমিট ও সময়সূচী দিচ্ছে না এমনও অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন…সারা চীনে জাদুঘরে প্রদর্শনীর সংখ্যা ৩৬ হাজার
আজ ২০ শে আগস্ট শনিবার সকালে বরগুনা নদী বন্দর ঘুরে দেখা যায়, আগের ভাড়ায়ই চলছে ঢাকাগামী লঞ্চগুলো। দুই শ্রেনীর কেবিনের ভাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে, সিঙ্গেল কেবিনে ১ হাজার ৬০০ শত টাকা ও ডাবল কেবিনে ৩ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র ডেক যাত্রীদের ভাড়া ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০ টাকা।
মিঠু হাসান নামে ঢাকাগামী কয়েকজন যাত্রী বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরমধ্যে আবার লঞ্চের ভাড়াও বাড়িয়েছে আকাশ ছোঁয়া। তবে বরগুনায় লঞ্চ ভাড়া তেমন বাড়েনি, ডেকে শুধু ১০০ টাকা বেড়েছে। এটাও অনেকের কাছে বেশি।
মাহফুজ রাব্বানী নামে এজন কেবিনযাত্রী বলেন, বরগুনা ঢাকা রুটে কেবিন ভাড়া আগের মতই আছে। এতে আমরা যাত্রীরা খুশি। সরকার যে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তা কার্যকর হলে লঞ্চে কোন যাত্রী থাকবেনা।
আরও পড়ুন…বঙ্গোপসাগরের গভীর‘নিম্নচাপ’ ৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
এমকে শিপিং লাইনসের মালিক মাসুম খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিশেষ ব্যক্তিরা নতুন লঞ্চ দিয়ে আয়ের জন্য অনেক চেষ্টা চালিয়েছে। এখন ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এক সময় এ রুটে তেমন যাত্রী চলাচল করতো না। আমরাই এ রুটকে জনপ্রিয় করতে পরিশ্রম করেছি।
আমাদের লঞ্চের সেবা ও মান ভালো, তাই যাত্রীও যাতায়াত করে অধিক। আগে লঞ্চ থেকে চাঁদা তোলা হতো, এখন স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সংবাদকর্মীদের কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়াও সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট দেখিয়ে আমরা ভাড়া নিচ্ছি ছয়শত টাকা। বিআইডব্লিউটি নির্ধারিত চার্ট থেকেও সব সময় আমরা ভাড়া কম নিয়ে থাকি।
এ বিষয়ে এমকে শিপিং লাইন্সের বরগুনা ঘাট ব্যবস্থাপক এনায়েত হোসেন বলেন, তেলের দাম বাড়ার পর নতুনভাবে বরগুনা-ঢাকা রুটে ডেকের ভাড়া ৭৬৩ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৩ হাজার ৫২ টাকা ও ডাবল কেবিন ৬ হাজার ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডেক যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়া থেকে ১৬৩ টাকা কমিয়ে ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গেল কেবিন ৩ হাজার ৫২ টাকা করা হলেও এক হাজার ৪০০ টাকা কমিয়ে আগের মতো ১ হাজার ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর ডাবল কেবিনেও ৩ হাজার ১০৪ টাকা কমিয়ে আগের ভাড়া ৩ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।
ইবাংলা/জেএন/২০ আগস্ট,২০২২
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.