গ্রুপ সেরা হয়েই নক-আউট পর্বে আর্জেন্টিনা

ক্রীড়াঙ্গন ডেস্ক

প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিসে হতাশায় পড়েছিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সেই আক্ষেপ কাটিয়ে দিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। যার সুবাদে এক গোলের লিড নিয়েছিল আর্জেন্টিনা।

এরপর যেন আরও জ্বলে উঠতে শুরু করেছে আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা। ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজের দুর্দান্ত এক গোলে ২-০তে এগিয়ে গেল আলবিসেলেস্তেরা। যার সুবাদে চলতি কাতার বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করলো কোচ লিওলেন স্কালোনির আর্জেন্টিনা।

ডু অর ডাই ম্যাচ, সেই ম্যাচেই কিনা প্রথমার্ধে পেনাল্টি মিস করলেন মেসি। তবে মেসির সেই পেনাল্টি মিসের দুঃখ ভুলিয়ে দিলো দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল করে। প্রথমে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, এরপর জুলিয়ান আলভারেজ। ৪৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন ম্যাক অ্যালিস্টার, এরপর ম্যাচের ৬৮ মিনিটে আলবিসেলেস্তাদের ২-০ গোলের লিড এনে দেন আলভারেজ।

ম্যাচের ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ লিওনেল মেসি। তবে তার পেনাল্টি মিসের আক্ষেপ বেশি সময় থাকতে দেননি ম্যাক অ্যালিস্টার। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই ডি-বক্সের ভেতর থেকে পোল্যান্ডের জালে বল জড়িয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন ম্যাক অ্যালিস্টার।

এই গোলের মিনিট বিশেক পর দলের হয়ে ব্যবধান বাডান আলভারেজ। এনজো ফার্নান্দেজের কাছ থেকে বল পেয়ে দুর্দান্ত শটে পোল্যান্ডের জালে দলের হয়ে দ্বিতীয়বার বল জড়ান আলভারেজ।

সৌদি আরবের কাছে হারটা ছিলো অপ্রত্যাশিত। সেই হারের পর বিশ্বকাপের নক-আউটে ওঠার সমীকরণটাই কঠিন হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার জন্য। জিতলে নক-আউট, হারলে বিদায় আর ড্র করলে তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে, এমন সমীকরণ সামনে নিয়ে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় স্টেডিয়াম ৯৭৪’এ পোল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। অন্য সব সমীকরণ বাদ দিয়ে নিজেদের ম্যাচে জিতেই নক-আউট নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই মাঠে নামে আলবিসেলেস্তারা।

ম্যাচের শুরুতেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচে দ্বিতীয় মিনিটেই কর্নার আদায় করে তারা। শট কর্নার থেকে নেওয়া ক্রস থাকে হেড করতে গিয়ে বার্তোজ বেরেশিনস্কিকে ফাউল করেন নিকোলাস ওতামেন্দি। ফলে গোলের সুযোগ হাত ছাড়া হয় আর্জেন্টিনার। ম্যাচের ৪ মিনিটে আক্রমণে যায় পোল্যান্ড। তবে তা থেকে সুবিধা করতে পারেনি তারা।

ম্যাচের ৭ মিনিটে পোল্যান্ডের ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে গোলমুখে শট করেন মেসি। তবে তা সহজেই নিজের গ্লোভসে নেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক ওজিয়েক সিজিসনি। ম্যাচের ৯ মিনিটে আর্জেন্টিনা গোছানে আক্রমণে গেলেও তা আটকে যায় পোল্যান্ড ডিফেন্সে। ম্যাচের ১০ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে শট করেন মেসি। তবে তা আবারও আটকে দেন ওজিয়েক সিজিসনি।

ম্যাচের ১১ মিনিটে পর পর দুটি আক্রমণ করলেও তা থেকে গোল বের করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১৪ মিনিটে ডিফেন্স চেরা পাস দেন হুলিয়ান আলভারেজ। তবে তা কেউ রিসিভ করতে না পারায় কোন বিপদ হয়নি। ম্যাচের ১৬ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট করেন মার্কোস আকুনা। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে।

ম্যাচের ১৯ মিনিটে মেসির ক্রস থেকে হেড করেন আকুনা। তবে তা সহজেই নিজের গ্লাভসে নেন ওজিয়েক সিজিসনি। ম্যাচের ২১ মিনিটে একটি কর্নার পায় পোল্যান্ড। তবে কর্নার থেকে সুবিধা করতে পারেনি তারা। ম্যাচের ২২ মিনিটে কর্নার আদায় করে আর্জেন্টিনা। তবে তা থেকে কোন বিপদ ঘটাতে পারেনি তারা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ম্যাচের সহজ সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। ডি পলের ক্রস থেকে শট করেন হুলিয়ান আলভারেজ। তবে তা ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়। এরপর শট করেন আকুনা। কিন্তু সেটিও চলে যায় পোস্টের বাইর দিয়ে।

ম্যাচের ৩২ মিনিটে কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার নেওয়া কর্নার গোলমুখ থেকে ফিরিয়ে দেন পোলিশ গোলরক্ষক ওজিয়েক সিজিসনি। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ফের কর্নার পায় আর্জেন্টিনা। শট কর্নার থেকে বল পান মেসি। ডি বক্সের বাইর থেকে শট করেন তিনি। তবে তা চলে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে বাম দিকে থেকে ক্রস করেন হুলিয়ান আলভারেজ। তার ক্রস থেকে হেড করেন মেসি। তবে তা চলে যায় বাইরে দিয়ে। তবে মেসিকে ফাউল করার কারণে পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের ৩৯ মিনিটে মেসির নেওয়া পেনাল্টি বাম দিকে ঝাপিয়ে সেভ করেন পোলিশ গোলরক্ষক ওজিয়েক সিজিসনি। ফলে গোল বঞ্চিত থাকে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪০ মিনিটে বাম দিক থেকে ক্রস করেন মেসি। তবে তাতে কেউ পা ছোঁয়াতে পারেনি। এরপর বেশ কিছু আক্রমণ করেও গোল করতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত আর কোন গোল না হলে গোলশূন্য থেকে বিরতিতে যায় দু’দল।

বিরতি থেকে ফিরেই গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে ডান দিক থেকে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে গোল প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। তার গোলে ম্যাচে প্রথম লিড পায় আর্জেন্টিনা। এটাই ম্যাক অ্যালিস্টারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল।

ম্যাচের ৫২ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ডি বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। তবে শট করতে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর আবারও অ্যাটাকে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৫৬ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে হুলিয়ান আলভারেজের নেওয়া শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে প্রতিহত হয়।

ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ডি মারিয়াক ও আকুনাকে উঠিয়ে নেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। ম্যাচের ৬১ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের সুযোগ পান ম্যাকএলিস্টার। তবে তার নেওয়া শট রুখে দেন ওজিয়েক সিজিসনি। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল নিয়ে যান মেসি। ডি বক্সে ঢুকে শট করলেও তা প্রতিহত হয় ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে।

ম্যাচের ৬৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। গোছানো আক্রমণে এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকে ডি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে দুর্দান্ত শটে বল জালে জড়ান জুলিয়ান আলভারেজ। আলভারেজের গোলেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

ইবাংলা/টিএইচকে

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.

Contact Us