রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধকে এক দশক পর্যন্ত স্থায়ী করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মান মালিকানাধীন মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে বলা হয়, কোরীয় উপদ্বীপ, দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলেও চলমান সংকট দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা আছে ওয়াশিংটনের।
প্রায় ১৬ মাস ধরে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে থাকলেও শান্তি আলোচনার বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে মার্কিন বেশ কয়েকটি সংস্থা হোয়াইটহাউসের সাথে আলোচনা করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হলে লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র। কেননা সেক্ষেত্রে আরো বেশি সময় ধরে ইউক্রেনকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার সুযোগ পাবে ওয়াশিংটন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কিয়েভকে সবথেকে বেশি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। মার্কিন কর্মকর্তারাও বলছেন, আরও কিছুদিন উত্তপ্ত থাকবে যুদ্ধ পরিস্থিতি।
আরও পড়ুন>> মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা স্থগিত
ইউক্রেন সংকট দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছি, যাতে করে সংকটটিকে একেবারে জমিয়ে বা গলিয়ে ফেলা যায়।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বর্তমানে এ পরিকল্পনা বাইডেন প্রশাসনের সর্বোচ্চ মনোযোগ পেয়েছে। যেখানে বিগত মাসগুলোতে, ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে মার্কিন তৎপরতা ছিল জরুরি ভিত্তিতে এবং স্বল্পমেয়াদি।’
অন্য দুই মার্কিন কর্মকর্তা এবং বাইডেন প্রশাসনের সাবেক এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার একটি উদ্দেশ্য হতে পারে – এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র নিজে ভালোভাবে প্রস্তুত হবে। তারা জানান, মার্কিন কর্মকর্তারা কিয়েভের সঙ্গে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা সম্পর্ক, সেই সঙ্গে ন্যাটো সামরিক জোটের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক কী হবে তা নিয়েও ভাবছেন।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এ ধরনের অচলাবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিধাজনক। কারণ, এতে যুদ্ধ ব্যয় অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি কিয়েভ কিংবা মস্কো কাউকেই একে অপরের ওপর জয়ী হতে দেবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিকল্পনার অর্থ হলো, যুদ্ধ অনেকাংশেই কমে যাবে; কিন্তু কোনো পক্ষই একে অপরের বিপক্ষে নিজেকে জয়ী বলে ঘোষণা করতে পারবে না। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শেষ বলেও ঘোষণা করতে পারবে না। এর আরও সহজ অর্থ হলো – রণক্ষেত্রে যুদ্ধ অনেকটাই কমে যাবে এবং সামরিক ব্যয় হ্রাস পাবে, যেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিধাজনক।
এদিকে, পূর্ব-ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতে নিজেদের আরও অগ্রগতি দাবি করেছে কিয়েভ। বিপরীতে রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপও নিজেদের অগ্রগতি দাবি করেছে।
অবশ্য রাশিয়ার নিয়মিত বাহিনী বাখমুতের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে সরে এসেছে বলে জানিয়েছেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। এ অবস্থায় রুশ সেনাদের ইউক্রেনীয় বাহিনী দ্বারা ঘেরাও হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে বলে শঙ্কা তার। যদিও কৌশলগত কারণেই কিছু সেনা সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন>> কানের রেড কার্পেটে হেঁটে আলোচনায় ঐশ্বরিয়া
অন্যদিকে, ইউক্রেনে এফ-সিক্সটিন ফাইটার জেট পাঠানোর অনুমতি দেয়া হবে বলে সম্প্রতি ইউরোপীয় মিত্রদের ইঙ্গিত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কিয়েভে মস্কোর বিমান হামলা তীব্র হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বেশ কয়েকদিন ধরেই বলে আসছিলেন, শিগগিরই এই আক্রমণ শুরু হবে।
কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি জানান, পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে আরও সময় প্রয়োজন।
এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বলছে, রুশ সেনারা যাতে এই আক্রমণের ধরন বুঝতে না পারে, সেজন্য পরিকল্পিতভাবেই হয়ত এই ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.