‘আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন ও পণ্য পরিবহন সেবায় ‘জনগণের অন্তরে স্থান পেয়েছে বিআরটিসি’। বছরের পর বছর লোকেসানে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি লোকসান কাটিয়ে বর্তমানে লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। সুনামের এ ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব)। যিনি এখানে যোগদানের পর অনেকাংশে পাল্টে গেছে প্রতিষ্ঠানটির চিত্র। তাঁরই হাত ধরে এক সময়ের জ্বরাজীর্ণ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি আজ সার্বিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়েছে। বিআরটিসি একটি রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পরিবহন সংস্থা এবং এর কর্ম পরিবেশ দেশের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শত প্রতিকূল পরিবেশ থাকা অবস্থায় এবং নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে সততা, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে জ্বরাজীর্ণ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে সার্বিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করা যায় বর্তমান চেয়ারম্যান তার একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
মো. তাজুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব) ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পূর্বে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্থাপনাসহ সব সেক্টরেই ভঙ্গুর অবস্থা ছিল। তার দক্ষ তত্বাবধায়নের ফলে বর্তমানে বেতন, বিভিন্ন ভাতা, ছাদখোলা পর্যটক বাস, দেশের বিভিন্ন জেলায় ২২টি বাস ডিপো ০২টি ট্রাক ডিপো থেকে ৬৩টি জেলায় নিরবচ্ছিন্ন যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ সেবা দিচ্ছে বিআরটিসি।
আরও পড়ুন>> আজ থেকে নতুন দামে সয়াবিন তেল ও চিনি
বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন রুটে মহিলা বাসসেবা ও ই-টিকিটিং, এ/সি বাসে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধাসহ যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিআরটিসির ৫০টি বাসে ড্যাস ক্যাম (সিসি টিভি ক্যামেরা) চলমান রয়েছে। ১২ শতাধিক বাসে ভেহিকেল ট্রাকিং (ভিটিএস) এর ম্যধেমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই বিআরটিসিতে র্যাপিড পাস চালুর পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।
বিআরটিসি তার জনকল্যাণকর কাজের জন্য বিভিন্ন মহলে প্রশসিংত হয়েছে। যার স্বীকৃতিস্বরুপ ২০২১-২২ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়ের অধিনস্ত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এপিএ বাস্তবায়নে ১ম স্থান শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেছে।
বর্তমান চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধায়নে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বিআরটিসি মিরপুর বাস ডিপোতেও। জ্বরাজীর্ণ ও অলাভজনক ডিপোটি আজ সুসজ্জিত। লোকসান কাটিয়ে দেখছে লাভের মুখ। নিয়মিত যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে নতুন পুরনো মিলিয়ে ১২৩টি বাস। যাত্রী সেবার মান বাড়াতে দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বিআরটিসি বাসে ওয়াইফাই চালু করা হয়েছে। এতে যাত্রীরা আধুনিক সেবা পাচ্ছেন।
ডিপোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্নত করা হয়েছে। বর্তমানে ৪৬জন বেসিক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। BRTC-SEIP প্রকল্পে আওতায় পূর্বে ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। বর্তমানে ১০০ জন করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পরবর্তী মাস থেকে ১৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে জয়িতা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীদের নিয়মিত মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আগামীতে স্কুটি ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন ডিপোর ইউনিট প্রধান আব্দুল মুহাইমিম সজীব।
আরও পড়ুন>> রাজধানীতে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ
তিনি জানান, পুরো ডিপো জুড়ে করা হয়েছে উন্নতমানের আলোর ব্যবস্থা (এলইডি ফ্লাড লাইট ও স্ট্রিট লাইট)। স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক প্রধান কার্যালয় হতে মনিটরিং করা হচ্ছে। রয়েছে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা। নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াশিং র্যাম্প। ডিপো টয়লেট, বাথরুম ও মসজিদ সংস্কার করা হয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফিল্টারের মাধ্যমে নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন করে চালু করা হয়েছে পেট্রোল পাম্প। প্রতিটি সেকশনে নিশ্চিত করা হয়েছে কম্পিউটারের ব্যবহার। কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ প্রদান এবং উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। আইসিটি সেল গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ কাজই ডি-ফাইলের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিজস্ব আয় হতে প্রতিমাসের ১ তারিখে পরিশোধ করা হচ্ছে। ৩ মাস অন্তর অন্তর গ্র্যাচুইটি সিপিএফ ও ছুটি নগদায়নের টাকা অনলাইনে পরিশোধ করা হচ্ছে। ক্রয় করা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যা দ্বারা হালকা ও ভারী মেরামতের কার্যক্রম চলমান আছে। ট্রেনিংয়ের জন্য পূর্বে ৫টি গাড়ি ছিল। বর্তমানে আরও ০২টি ট্রেনিং কার যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া মূল ভবনের ৩য় তলায় ট্রেনিং সেন্টারের বর্ধিত করণের কাজ চলমান রয়েছে।
আব্দুল মুহাইমিম সজীব বলেন, আমাদের ডিপোর পুরনো কক্ষগুলো নতুনভাবে মেরামত করে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছ। বর্তমানে ডিপোর প্রধান ফটকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে।
বিআরটিসি মিরপুর বাস ডিপোর বাসগুলো মিরপুর-মতিঝিল-স্টেশন রোড, রায়েরবাগ-মতিঝিল-স্টেশন রোড, আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে এবং ২৬নং রুটে নগর পরিবহণ নামে যাত্রীসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
নারীদের জন্য মিরপুর-রূপনগর-মতিঝিল ও মিরপুর-টেকনিক্যাল-মতিঝিল এই ০২টি রুটে মহিলা বাস সার্ভিস চলমান রয়েছে।
এ ছাড়াও কমলাপুর-লক্ষ্মীপুর, গুলিস্থান-গোসেরহাট, কুড়িল বিশ্বরোড-বিশনন্দী ফেরিঘাট রুটেও মিরপুর ডিপো যাত্রী সেবা প্রদান করে আসছে।
ইবাংলা/এসআরএস
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়েছে.