রোববার (১৪ নভেম্বর) শুরু হচ্ছে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তারের। কিন্তু স্বামীর নির্মম নির্যাতন ও ধারালো বঁটির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে এখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সুমাইয়া।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে ঐ উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের সোহাগপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মাস ছয়েক আগে সাইফুল ইসলাম নামে যে যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিলো সুমাইয়া আক্তারের।
সুমাইয়াকে বাঁচাতে গিয়ে বঁটির আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার বোন ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার সুমি ও মা নাছিমা আক্তার। আহত তিনজনেরই হাত, মাথা ও গলায় অন্তত ১৫-২০টি বঁটির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সুমাইয়ার প্রতিবেশী রবিন মিয়া বলেন, ভোরে চিৎকার চেচামেচি শুনে সুমাইয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখি সুমাইয়া, সুমি ও তাদের মা নাছিমা আক্তার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর পুলিশের সহায়তায় তাদের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে আসি। ঘটনাস্থল থেকে সাইফুলকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
হামলার শিকার সুমাইয়ার নানী জয়নব বলেন, গত রোববার সাইফুল আমাদের বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে সাইফুল ও সুমাইয়া এক ঘরে ছিল। আমি, সিমু ও নাছিমা আরেক ঘরে ছিলাম। ভোর বেলা সুমাইয়ার চিৎকারে প্রথমে নাছিমা ও পরে সিমু এগিয়ে গেলে সাইফুল ওদের দু’জনকে বঁটি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। সুমাইয়ার গোপনাঙ্গে সাইফুল প্রথমে নির্যাতন করে। এরপর বঁটি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো আঘাত করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬-৭ মাস আগে একই উপজেলার বাশতৈল ইউনিয়নের আমরাতৈল গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বিয়ের পর সুমাইয়া ৩ মাস শ্বশুরবাড়িতে ছিল। এরপর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গত ৩ মাস ধরে নিজেদের বাড়ি সোহাগপাড়ায় আছে। সাইফুল মাঝেমধ্যেই সুমাইয়াদের বাড়িতে আসতো।
আরো জানা গেছে, দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উপার্জিত অর্থের হিসাব নিয়ে সাইফুলের সঙ্গে তার বাবার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এমনকি বিয়ের পর থেকে সাইফুল তার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করতেও ব্যর্থ হচ্ছিল।
স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, সাইফুলের বঁটির আঘাতে সুমাইয়ার কনিষ্ঠ আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ডাক্তাররা চেষ্টা করেও সেটি জোড়া লাগাতে পারেননি। এছাড়া সুমাইয়ার মা নাছিমা আক্তারের হাতের রগ কেটে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
দেওহাটা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আইয়ুব খান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমরা সাইফুল ইসলামকে আটক করেছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনো অস্পষ্ট।
ইবাংলা/এইচ/১২নভেম্বর ২০২১