নির্যাতনে লিবিয়ায় মাদারীপুরের দুই যুবকের মৃত্যু
ইবাংলা ডেস্ক
নিজের সমৃদ্ধ জীবন আর পরিবারের সকলকে সুখে রাখতে অনেকের সঙ্গে এই দুই তরুণও অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় অবস্থান করছিলেন বলে আহাজারিতে বলতে থাকেন নিহত দুই তরুণের স্বজনেরা। শনিবার (২০ নভেম্বর) রাতে লিবিয়া থেকে তাঁদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হন।
নিহত দুই তরুণ মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য খাগদী এলাকার আবুল কালাম খানের ছেলে সাব্বির খান (২১) ও বড়াইলবাড়ি এলাকার মো. হাবিবুর রহমান তালুকদারের ছেলে সাকিবুল হাসান ওরফে সুরুজ (২২)।
নিহতদের স্বজন ও পুলিশের সূত্র জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে স্থানীয় দালাল সবুজ মীরের মাধ্যমে ৮ লাখ টাকা চুক্তিতে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন সাকিবুল। চুক্তির অর্ধেক টাকা পরিশোধ হলেও বাকি টাকা ইতালি পৌঁছানোর পরে দেওয়ার কথা। তবে লিবিয়াতে পৌঁছানোর পরেই বাকি ৪ লাখ টাকা জন্য দালাল চক্র সাকিবুলকে একটি বন্দিশালায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে শনিবার রাতে দালালদের নির্যাতনে মারা যান সাকিবুল। অন্যদিকে, সাব্বির খান চরনাছনা এলাকার দালাল কাশেম মোড়লের মাধ্যমে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চুক্তিতে ৬ মাস আগে লিবিয়া পৌঁছান। তাঁকেও লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক রাখা হয়। টাকা জন্য তাঁকেও শারীরিক নির্যাতন চালান দালালেরা।
সাব্বিরের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘রাইতে আমি বাড়ি ছিলাম না। মেলা রাইতে ভাইর বিডি (ভাইয়ের মেয়ে) হঠাৎ ফোন দিছে, ভাবছি মায় মইরা গেছে। বাড়িতে আইসা শুনি আমার পোলা মইরা গেছে। হায় আল্লাহ আমার পোলারে তুমি ফিরাইয়া দাও। আমার পোলা এম্মে মরতে পারে না।’
সাব্বিরের এক চাচি জানালেন, স্থানীয় দালাল আতিবার, তোতা ও কাশেম ৬ মাস ধরে সাব্বিরকে লিবিয়া নিয়ে আটকে রাখছে। লবণ ছাড়া খালি ভাত এক বেলা খেতে দিয়েছে।
সাব্বিরের খালু মো. ওবায়দুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘সাব্বিরের মাথায় ধারালো কিছু একটা দিয়ে আঘাত করছে। এ কারণে সাব্বির মারা গেছে। সাব্বিরের সঙ্গে যারা ছিল, ওরা আমাগো ফোনে ভিডিও কলে সব দেখাইছে। সাব্বিরের মৃত্যুর জন্য যে কয়জন দালাল দায়ী, আমরা তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’
সাকিবুলের মা নেই। বৃদ্ধ বাবাও বয়সের ভারে ঘরবন্দী। বড় চার তার মৃত্যুতে চার ভাই শোকাহত। কিন্তু ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর বাবার কানে গেলে সে হয়তো সহ্য করতে পারবেন না। তাই সবাই নীরব।
সাকিবুলের মেজ ভাই আরিফুর রহমান বলেন, ভাইডা বিএ পড়ত। পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল ছিল। তাই আমরা আর আটকাই নাই। দালালের সঙ্গে চুক্তি ছিল, লিবিয়া পর্যন্ত পৌঁছালে অর্ধেক টাকা দিতে হবে। পরে ইতালি পৌঁছে দিতে হবে বাকি টাকা। বডি কন্ট্রাক্ট ছিল। কিন্তু গেম হওয়ার আগেই এভাবে যে মারা যাইবে, তা মানতে পারছি না।
মাদারীপুরে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (অক্টোবর পর্যন্ত) মানব পাচার আইনে ৩০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপরেও দালালদের দৌরাত্ম্য কমছে না।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, লিবিয়াতে মাদারীপুরের দুজন মারা যাওয়ার খবর তাঁরা শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত নিহত তরুণদের পরিবার কোনো সহযোগিতার জন্য আসেনি। এরপরও নিহত ওই দুই পরিবারের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এসপি গোলাম মোস্তফা বলেন, ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে মামলা বা অভিযোগ দিতে তেমন একটা আসে না। এখানে সচেতনতা বা প্রচারণা করেও লাভ নেই। কারণ, বাংলাদেশ থেকে বৈধ পথে ইতালি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা বেশির ভাগ ইতালি পৌঁছে ভালো আছেন। দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। এটা দেখে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছেন। তাই এঁদের ফেরানো যাচ্ছে না।
ইবাংলা / এইচ / ২৩ নভেম্বর, ২০২১