আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পেরিয়ে গেল ৯ বছর। কিন্তু নিহত এবং আহতদের পরিবারের সেই ক্ষত পুরন হয়নি আজও। দেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে অন্যতম এ দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে মারা যান ১১৩ জন শ্রমিক, আহত হন দুই শতাধিক। সেদিনের ভয়াবহ আগুন থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিকরা আজও শরীর আর মনে বয়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষত।
২০১২ সালে এই দিনে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের তাজরিন ফ্যাশন নামের পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড কেড়ে নেয় শত শ্রমিকের প্রাণ। জীবন বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়েও মারা যায় অনেকেই। আগুনের লেলিহান শিখার মাঝে শত শত শ্রমিকের বাঁচার আকুতি আর কান্না, নাড়া দিয়েছিলো সারা বিশ্বকে।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে পুড়ে যাওয়া তাজরীন গার্মেন্টসের ফটকে ফুল দিয়ে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এসময় নিহতদের স্বজন, আহত শ্রমিক ও টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিকলীগসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়। পরে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও নীরবতা পালন করা হয়।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বলেন, আজকের এই দিনে প্রথম প্রহরে আমরা তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। বরাবরের মতোই এই কর্মসূচিতে শ্রমিকরা অংশ নিয়েছেন।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের আশুলিয়া কমিটির সভাপতি ইউসুফ শেখ বলেন, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আগুন লাগার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ গেটে তালা লাগিয়ে শতাধিক শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার ৯ বছর পার হলেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। গত বছর ৪ মাসের বেশি সময় ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাজরীনের অর্ধশত শ্রমিক তাদের দাবি আদায়ে অনশন করলেও এর কোনো সমাধান হয়নি।
তাজরিন অগ্নিকান্ডের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তারসহ ১৩ জন আসামি করে মামলা রুজু করা হয়। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডির পুলিশের পরিদর্শক একেএম মহসীনুজ্জামন।
এরপর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। চার্জশিটে, ভবনটির নকশায় ত্রুটি ও জরুরি নির্গমনের পথ না থাকায় এবং আগুন লাগার পর শ্রমিকরা বাইরে বের হতে চাইলে নিরাপত্তা কর্মীরা আগ্নিকাণ্ডকে অগ্নিনির্বাপন মহড়া বলে শ্রমিকদের কাজে ফেরত পাঠিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়ার কারণে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় বিচার থমকে আছে। ১০৪ জন সাক্ষীর এ মামলায় গত ৫ বছরে মাত্র আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পেরেছেন আদালত। ফলে এ মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার।
ইবাংলা/টিপি/২৪ নভেম্বর, ২০২১